জুনে ৩৪ প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে বিল বন্ধ
প্রায় এক দশক আগেসহ গত কয়েক বছরের মধ্যে নেওয়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অন্তত ৩৪টি প্রকল্পের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে প্রকল্পগুলো শেষ না হলে বিল দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর বার্তা দিয়ে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় বিল পরিশোধ করা হবে না এবং ঠিকাদারসহ দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের তাগিদের ফলে পুরনো-নতুন মিলে প্রায় ৩৪টি প্রকল্পের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ নানাভাবে উপকারভোগী হবে।
এ বিষয়ে চাইলে পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান আমাদের সময়কে বলেন, মন্ত্রণালয়ের ৩৪টি প্রকল্প আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিল দেওয়া হবে না। এ ছাড়া অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা। প্রকল্পগুলোর কাজের মানসহ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের বিষয়টি তদারকি করছি। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর কোনো প্রকল্প যদি দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা থাকে, তবে সেটির নির্ধারিত অর্থবছরের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে এমন ৩৩টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে কৃষি খাতে সেচকেন্দ্রিক তিনটি প্রকল্প। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে নেওয়া ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-ফর মহুরী ইরিগেশন প্রজেক্টটি আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। এ ছাড়া রয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে নেওয়া চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অধীন চর বাগদী পাম্প হাউস ও হাজিমারা রেগুলেটর পুনর্বাসন প্রকল্প, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালিপাড়া উপজেলার আওতায় সাপোর্ট টু সাউথ ওয়েস্ট এরিয়া ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থা নিয়ে আরও ৩০টি প্রকল্প আগামী জুনের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই নেওয়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, ২০১৩ সালের মে মাসে নেওয়া চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পতেঙ্গা, আনোয়ারা ও আনোয়ারা-পটিয়া পুনর্বাসন প্রকল্প; কিশোরগঞ্জে নির্মিতব্য মিঠামইন ক্যান্টনমেন্টের ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রকল্প; নীলফামারীর চাড়ালকাটা নদী সোজারকরণ এবং বড়িতিস্তা নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প; সিরাজগঞ্জের চৌহালীর খাস পুকুরিয়া হতে চরসলিমাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদীর বাম তীরের ভাঙন রক্ষা, নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প।
এ ছাড়া রয়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা শাখা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে নওয়াপাড়া এলাকা এবং পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন হতে চরআত্রা এলাকা রক্ষা প্রকল্প; সিলেট সদর ও বিশ^নাথের দশগ্রাম, মাহাতাবপুর ও রাজাপুর পরগণা বাজার এলাকার সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রক্ষা প্রকল্প; সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার আওতাধীন সুরমা নদীর ডান তীরে অবস্থিত দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লক্ষ্মীবাউর ও বেতুরা এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প; কুমিল্লার তিতাস ও হোমনায় তিতাস নদীর লোয়ার তিতাস পুনঃখনন প্রকল্প; গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জের গোঘাট ও খানাবাড়িসহ পার্শ^বর্তী এলাকা যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প; দিনাজপুরের ঢেপা, পুনর্ভবা ও টাঙন নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প; কোস্টাল এমবাকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট জেফ-১ ইন সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা এবং পটুয়াখালী জেলা; হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প।
লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচায় তিস্তা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, গাজীপুরের কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়নের তারাগঞ্জ বাজার এবং সংলগ্ন এলাকা শীতলক্ষ্যা নদীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প; ৬৪ জেলার অভ্যন্তরের ছোট নদী-খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প; ব্যাম্বো ব্যান্ডিলিংয়ের মাধ্যমে জামালপুরের ইসলামপুর ও মেলান্দাহর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, আলাইখাল ও যমুনার শাখা নদীর ভাঙন রক্ষা প্রকল্প; যমুনা নদী সিস্টেমের বাম তীরে সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প; বাংলাদেশ নদনদীসমূহের তথ্যাদি হালনাগাদকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
দেশের মাঝারি নদীর জন্য নদীতীর ভাঙন পূর্বাভাস এবং ভাঙন প্রশমনের টেকসই কৌশল নির্ধারণের বিস্তারিত সমীক্ষা প্রকল্প; পাবনার পদ্মা নদীর বেসিন ব্যবস্থাপনা এবং পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প, নোয়াখালীর হাতিয়ায় সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের নিমিত্ত সম্ভব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প; খুলনার দাকোপে পানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা প্রকল্প; চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদী এবং চাঁপাইনবাগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর জেলার পদ্মা নদীর বেসিন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প; পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা; যমুনা নদীর চর স্থিতিশীল ও জীবিকায়ন প্রকল্পের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা।
কীর্তনখোলা-সুগন্ধা-বিষখালী নদী অববাহিকার পানিসম্পদ ব্যবস্থপনার লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প; বর্ণি বাঁওর এলাকার পানি, পবিরেশ. প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সমন্বিত এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিস্তারিত সমীক্ষা; নাফ নদীর মোহনার উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং শাহপরীর দ্বীপের ভূমি উন্নয়নের নিমিত্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প। এ ছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ ডাক ও টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত পানি বিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য সেবা ও আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটিও জুনের মধ্যেই শেষ হবে।