বড় হচ্ছে এসির বাজার

আবু আলী
০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বড় হচ্ছে এসির বাজার

ধারাবাহিকভাবে কয়েক বছর ধরে দেশে গরমের মাত্রা বাড়ছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে জীবনে স্বস্তি আনতে অনেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) প্রতি ঝুঁকছেন। এক সময় এসিকে বিলাসী পণ্য বলা হলেও এখন প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। গরমে মানুষের এসির উপর নির্ভরতা বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও সংযোজনের ফলে ঘরের এই অনুষঙ্গ সহজে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ভোক্তাদের বাজেটবান্ধব হয়ে উঠেছে এসি, তাই বাজারও বেড়েছে। সুপরিচিত বিদেশি ব্র্যান্ডের এসি যেমন দেশের কারখানায় তৈরি হয়, তেমনি দেশীয় ব্র্যান্ডও গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালে প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ পরিবারে (খানা) এসির ব্যবহার ছিল। ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ২৮ শতাংশে। দেশে খানার সংখ্যা এখন ৪ কোটি ১০ লাখের মতো।

স্কয়ার ইলেক্ট্রনিক্সের ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মঞ্জুরুল করিম আমাদের সময়কে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এসির চাহিদা বাড়ছে। তবে এ বছরের হিসাব অন্যরকম। কারণ তাপমাত্রা অনেক বেড়েছে। ফলে যাদের পরিকল্পনা ছিল না তারাও এখন এসি কিনছেন। অনেকে গরম থেকে বাঁচতে ঋণ করেও কিনছেন। দেশি এবং চাইনিজ ব্র্যান্ডের চাহিদা বেশি।

গত কয়েক বছর ধরে দেশে এসির খাত বার্ষিক প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এয়ার কন্ডিশনিং ইকুইপমেন্টস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএইআইএ)। তারা বলছে, বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে এ বছর বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গ্রাহক এখন আর এসিকে বিলাস পণ্য বলে মনে করছে না বলে দাবি করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল। তিনি বলেন, গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনা করে আমরা এসি উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছি। বর্তমান প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকলে আগামীতে বাজারের ৪০ শতাংশ আমাদের ব্র্যান্ড থাকবে।

সাশ্রয়ী দামে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী সর্বাধুনিক ফিচারের এসি উৎপাদন ও বাজারজাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের চিফ বিজনেস অফিসার মো. তানভীর রহমান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমরা গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছি।

বর্তমানে এসির চাহিদার ৯০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত অথবা সংযোজিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ওয়ালটন, মার্সেল, যমুনা, মিনিস্টার, ট্রান্সটেক, ইলেকট্রা, এলিট, র‌্যাংগস, স্মার্ট, ভিশন, সেইফসহ বিভিন্ন দেশীয় ব্র্যান্ড রয়েছে। এছাড়া দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত বিদেশি ব্র্যান্ডের এসির মধ্যে রয়েছে গ্রি, সিঙ্গার, এসিসি, স্যামসাং, হায়ার, হিটাচি, মিডিয়া, এলজি, হাইসেন্স শার্প, জেনারেল, প্যানাসনিক, ডাইকিন প্রভৃতি। যেসব কোম্পানি এখন সংযোজন করছে, তারাও ভবিষ্যতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। এর বাইরে চীন থেকে বিভিন্ন এসি আমদানি হয়।

এসি উৎপাদন ও বিপণনকারীরা জানান, দেশে এখন বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হয়। করোনার আগে দেশে এসি বিক্রি বছরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ছিল। তবে করোনার মধ্যে এসির চাহিদা অনেক কমে যায়। তবে গত দুই বছরে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, চলতি বছর এসি বিক্রি বাড়বে প্রায় ৩০ শতাংশ।

জানা গেছে, এক বছর আগে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া চায়নিজ এসির দাম এখন ৪২ থেকে ৪৮ হাজার টাকা। দেড় টনের (স্থানীয় বা চায়নিজ) এসির দাম এখন ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা, যা এক বছর আগেও ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। বিদেশি বড় ব্র্যান্ডের একই সাইজের এসির দাম ৯০ থেকে এক লাখ টাকা ছিল, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। দাম বৃদ্ধির পেছনে ডলার সংকট এবং বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ঘাটতির কারণে উৎপাদকদের খরচ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে দাম বেড়েছে।

যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেডের পরিচালক মার্কেটিং সেলিম উল্যা সেলিম আমাদের সময়কে বলেন, এক সময়ের পুরোপুরি আমদানিনির্ভর এই শিল্পে বর্তমানে দেশীয় কোম্পানিগুলো আধিপত্য বিস্তার করে আছে। দেশি এবং বিদেশি এসির মানে কোনো ফারাক নেই। একটা সময় ছিল যখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য ছিল। সে দৃশ্য পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন এসির বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশই স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। এসি রপ্তানির সম্ভাবনা খুবই ভালো। তবে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের একটা বড় বাজার এখনো আনটেপড আছে। পাশাপাশি এরই মধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকায় আমরা আমাদের পণ্য রপ্তানি করছি। বিশেষ করে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের পণ্য বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে। তাই সরকারি নীতিসহায়তা এবং কিছু সুযোগ-সুবিধা যদি প্রদান করা হয় বাংলাদেশের এসির বাজার আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।

মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সামসুদ্দোহা শিমুল বলেন, দেশের বাজারে আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর অবস্থা খুবই ভালো। মানুষ

এখন বিদেশি পণ্য না কিনে আমাদের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয়ে বেশি আগ্রহী। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দিন দিনই এসির চাহিদা এবং বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর দেশের ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণ করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা হিসেবে আমরা বৃহত্তর বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছি।