চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীকে বিক্রির অভিযোগ
বেশি বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে (৩৪) সৌদি আরবে নিয়ে বিক্রির অভিযোগে মামলা করেছেন তার ভাই সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর। গত বুধবার সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় মামলা করেন তিনি।
এ ঘটনায় মামলার পর বুধবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল (২৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে শ্যামনগর থানা পুলিশ। এর আগে গত ১৯ মার্চ ঢাকাস্থ মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরব যান ওই নারী।
মামলার আসামিরা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল, তার মা তাসলিমা এবং সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার মো. রাসেল আকন (৩৩)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর ভাই সালাউদ্দীন জানান, প্রায় তিন বছর আগে বিয়ে হলেও ৬ মাস আগে তার বোনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এ সময় পিতার বাড়ি অবস্থানের সুযোগে পূর্ব পরিচিত তাসলিমা ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর তার বোনকে সৌদি আরবে গিয়ে চাকরির প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে উচ্চ বেতনে ভালো চাকরির প্রলোভনে তার বোন পাসপোর্ট তৈরি করেন। ১৭ মার্চ তাদের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান।
তিনি জানান, ঢাকা ত্যাগের পর থেকে বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেওয়া হলেও তার বোন ভালো জায়গায় কাজ করছেন বলে আশ্বস্থ করা হয়। তবে গত ১৬ এপ্রিল দুপুর ২টা ৪৬মিনিটে হটসআপ ‘ভয়েস কল’ পাঠিয়ে তার বোন নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানান। এ সময় কান্নাজাড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, সৌদিতে পৌঁছানোর পরই তার মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে তাকে একটি কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। শাররীকভাবে অসুস্থ হওয়ায় প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে গেলেও সেগুলো ছিনিয়ে নেওয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে না পেরে ক্রমেই শাররীক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে যৌনদাসী হিসেবে বিভিন্নস্থানে পাঠানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গৃহস্থলীর ভারি কাজ করানো হয়, তবে পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেন।
সালাউদ্দীন আরও বলেন, কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারপিট করার পাশাপাশি বাথরুমের পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে। তাকে ঠিকমত খেতে দেওয়া হয় না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে সে কাজ করতে না পারলে চরম অত্যাচার করা হয়। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে আমার বোন।
বোনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রাসেল আকন, তাসলিমা ও মোস্তাফিজুরসহ অপরিচিত ২-৩ জন এই মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা গ্রামের সহজ সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সী নারীদের টার্গেট করে।
সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার রাসেল আকন বলেন, সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে তিনি ওই নারীকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অভিযোগের বিষয়ে তাসলিমা বেগম বলেন, রোজিনার দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে তিনি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে ওই নারীকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন। বাধ্য হয়ে অন্য লাইসেন্স মালিককে দিয়ে তিনি বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করছেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে মানব পাচারের অভিযোগে ভুক্তোভোগী নারীর ভাই মামলা করেছেন। আসামিদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।