ফের রোপণের কথা বলে কাটা হলো সড়কের ১১৩৫টি গাছ
তীব্র তাপদাহের মধ্যে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে দেড় কিলোমিটার জুড়ে সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে ছায়া দেওয়া গাছগুলো কেটে ফেলায় জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার কৃষক, মৎস্যজীবী ও পথচারীদের ভাষ্য, চলমান তাপহের মধ্যে উজাড় করে সড়কের এসব গাছ কাটা উচিত হচ্ছে না। বরং সংকটময় পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে দু’দফায় গাছগুলো কাটলে অনেকটায় স্বস্তি পাওয়া যেত। তবে বনবিভাগ বলছে, আবারও এই সড়কের দু’পাশ দিয়ে গাছ লাগানোর উদ্দ্যোগ নেওয়া হবে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে উপজেলার সান্তাহার ইউপির সান্দিড়া গ্রাম থেকে রক্তদহ বিলের পাড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে একটি সমিতির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজরেরও অধিক শিশু ও ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন ধরনের বনজ গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সম্প্রতি এসব গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি হয়। দরপত্রের নিয়ম মেনেই প্রায় ১১৩৫টি গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়। সপ্তাহ খানেক আগে যখন তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন ঠিক তখনই এসব গাছ কাটা শুরু হয়। এরই মধ্যে সড়কের দুই পাশের প্রায় পাঁচশতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে সব গাছ কাটা শেষ হলে ছায়া শীতল এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের পুড়তে হবে প্রচণ্ড রোদে।
এ বিষয়ে সান্দিড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘তাদের গ্রামের একটি সমিতির মাধ্যমে এসব গাছ লাগানো হয়েছিল। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় গাছগুলো কাটার আবেদন করা হয়। সে অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গাছগুলো কাটা শেষে সমিতির মাধ্যমে আবারও রোপণ করা হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস নামের এক কৃষক বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী রক্তদহ বিলের বাঁধের (তীর) পাড়ে তার দুই বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। সেখানে যাওয়ার একমাত্র পথ এই সান্দিড়া সড়ক। ফসল কাটা, ধরে তোলা বা পরিচর্যার জন্য গিয়ে ক্লান্ত হলে সড়কের দুই পাশে থাকা এসব গাছের নিচে বসে একটু রেস্ট নেওয়া যেতো কিন্তু এখন থেকে মনে হয় তা আর হবে না।’
একই কথা বললেন ওই এলাকার মৎস্যজীবী আব্দুস সালামও। তিনি বলেন, ‘এই গরমের মধ্যে সব গাছগুলো এক দফায় টেন্ডার না করে দু’দফায় করলে পথচারীরা ছায়া ও বাতাস থেকে একদম বঞ্চিত হতেন না। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দাঁড়ানোর জন্য অন্তত একটু জায়গা পেতেন।’
সবুজ আন্দোলনের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাগর খান জানান, ‘গাছ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে। আর এ কারণেই একসঙ্গে এতোগুলো গাছ কাটায় তাপদাহ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকা বা সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দ্রুত ওই সড়কে বৃক্ষ রোপণের দাবি জানান তিনি।’
আদমদীঘির বন বিভাগের কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘ওই সড়কের দু’পাশে লাগানো অনেক গাছ মারা গেছে এবং বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। নিয়ম অনুয়ায়ী মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় গাছগুলো নিলামে দেওয়া হয়েছে। গাছকাটা শেষে আবারও রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে পথচারীরা ফের ছায়া শীতল সড়ক পান।’