এখন আর চুপ করে বসে থাকার সময় নেই: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই মহান মে দিবসে সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, মত ও পথ, শ্রমিকসহ দেশের সব মানুষের কাছে আহ্বান জানাতে চাই- এখন আর চুপ করে বসে থাকার সময় নেই। এখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমাদের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায় করব।’
আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রাপূর্ব শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশ শেষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ব্যানারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকের এই মহান মে দিবসে আমার পক্ষ থেকে শ্রমজীবী মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা এসব সময় এই দিবসটি পালন করছি, যখন সারাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত এমন সময় দিবসটি পালন করছি। যখন দেশটা দ্বৈত দানবের করলে পড়ে তছনচ হয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দুঃখ হয়, কষ্ট হয়- যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বলেন, ‘‘কী এমন ঘটল অতি বাম এবং অতি ডান একসাথে আমাদের পদত্যাগ চায়।’’ আপনারা সমস্যাটা বুঝতে পারেন না? কী ঘটেছে অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করেন? আজকে শুধুমাত্র অতি বাম আর অতি ডান নয়, হিন্দু-বৌদ্ধ নয়, সমগ্র দেশের মানুষ মনে করছে তাদের ন্যূনতম অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) আরেকটি কথা বলেছেন, ‘‘আমাদের অপরাধ কী?’’ আপনাদের অপরাধ আপনারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। জনগণের যে ন্যূনতম অধিকার পাঁচ বছর অন্তর অন্তর তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে, সেই অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছেন। নির্বাচনকে এমন একটি তামাশা-প্রহসনে পরিণত করছেন যে আপনারাই ডামি প্রার্থী দিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি- অনেক ভাই গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, আমাদের নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলায় জর্জড়িত। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো তিনি কারাবন্দী। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, সাজা দেওয়া হচ্ছে।’
উপস্থিত নেতাকর্মীর একাংশ
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এদের কৌশল একটু ভিন্ন-পার্লামেন্টে বিল পাস করে এরা বাকশাল প্রতিষ্টা করতে চায় না। গণতন্ত্রের একটি লেবাস রেখে দিয়ে ছদ্মবেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাকে ধ্বংস করে জনগণকে দমন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব সবলেন, ‘আজকে সারাদিন এই রোদের মধ্যে এখানে আছেন। এতেই আবার প্রমাণ করে শুধুমাত্র বিএনপিই নয়; এদেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষ এখন জেগে উঠছে, আবারও জেগে উঠবে। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো, ধ্বংসাবশেষ থেকেও আবারও জেগে ওঠে, জেগে উঠেছে। এরা পাখা ছড়িয়ে আবার আন্দোলন বিপ্লব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের কথা বলে। আমরা অতীতেও পরাজিত হইনি, আগামীতেও পরাজিত হব না। আমরা আমাদের লক্ষ্যে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রাম বিএনপির সংগ্রাম নয়। এই সংগ্রাম এ দেশের মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রাম, এই সংগ্রাম অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। এ জন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি, আমাদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে এই সরকার, পাটশিল্প, তাঁতশিল্প, চিনিশিল্পসহ বহু শিল্পকলকারখানা ধ্বংস করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে কী খেলা খেলেছে, এটা আপনারা দেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশিত পথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, ফিরোজ উজ জামানসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।