‘আজ থেইক্কা নদীতে নামমু, দেহি আল্লাহ কী করে’
নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাঁদপুরের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। দুই মাস পর আজ সোমবার রাত ১২টার পর থেকে নদীতে নামবেন তারা। এজন্য পুরোনো নৌকা ও ছেঁড়া জাল মেরামতে দিন কাটছে তাদের।
গতকাল রবিবার চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার এলাকার রণাগোয়াল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। দীর্ঘ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। তাই কাঙ্ক্ষিত প্রহরের অপেক্ষায় রয়েছে জেলে পরিবারগুলো।
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. কোরবান আলী (৬০)। দেশ স্বাধীনের কয়েক বছর পর থেকেই নদীতে মাছ ধরাই তার পেশা। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরেই এ পেশায় আসেন। যদিও গেল কয়েক বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে অনেকটাই হতাশ তিনি। এরপরও অন্য কোনো কাজ না জানায় আকঁড়ে ধরে আছেন এ পেশা।
আক্ষেপ করে কোরবান আলী বলেন, ‘একসময় নদীতে অনেক মাছ ছিল। জাটকা মৌসুম শেষে নদীতে নামলে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ইলিশ নিয়ে ফিরতাম। কিন্তু এহন আর ওই মাছের দেহা পাই না। আল্লাহ আমাগো ওপর অনেক নারাজ, তাইতো আমাগো এত কষ্ট। এরপরও বহুত আশা নিয়া আজ থেইক্কা নদীতে নামমু, দেহি আল্লাহ কী করে।’
একই সুরে কথা বললেন ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের দুদু মিয়া (৫৫) নামে আরেক জেলে। তিনি বলেন, ‘আমিও ছোট বেলা থেকেই মাছ ধরার পেশায় আছি। মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ ধরা নিয়ে রয়েছে আমার নানা অভিজ্ঞতা। তয়, নিষিদ্ধ সময়ে আমি মাছ ধরি না। কিন্তু অনেকে চুরি করে ধরে। আবার ধরা খেয়েও জেল-জরিমানা ভোগ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই খুব আনন্দে আছি। দীর্ঘ দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আমরা হাফিয়ে গেছি। এতদিনে অনেক ধার-দেনাও করে ফেলেছি। আশা করছি আল্লাহ যদি মুখ তুলে তাকায় তাহলে আমাগো দুঃখ আর থাকবে না।’
জানা গেছে, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাটকা সংরক্ষণে অভয়াশ্রম শেষে আজ সোমবার রাত ১২টার পর থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের ছয়টি উপকূলীয় অঞ্চলে শুরু হচ্ছে মাছ শিকার। গত মার্চ-এপ্রিল দু’মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেলার নিবন্ধিত জেলে পরিবারগুলো খুব কষ্টে দিনাতিপাত করে। তাইতো নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় ওইসব জেলে পরিবারে উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তাও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামায় প্রায় ৩ শতাধিক জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুই মাসে প্রায় ৫০ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট ও অন্য জাল, ৩ মেট্রিক টন জাটকা ও ৬০টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়েছে। আটক জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘এ বছর ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় অভয়াশ্রম এলাকায় ১০টি স্পিডবোট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ এ বছর রমজান মাসেও দিনরাতে নদীতে অবস্থান করেছে। তাইতো বহিরাগত কোনো জেলে এ বছর নদীতে নেমে জাটকা ধরতে পারেনি।’
উল্লেখ্য, জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুইমাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই সময়ে নিবন্ধিত জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।