রিজার্ভ ধরে রাখতে নজর বৈদেশিক ঋণে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে বৈদেশিক ঋণ ছাড় করাতে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। আগামী জুনের মধ্যে প্রতিশ্রুতির অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করাতে জোর তদবির করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সবশেষ গত ৩ এপ্রিল ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট মনিটরিং, বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকে রিজার্ভ নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বৈঠকে রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো; অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ে আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, প্রতিশ্রুত বিদেশি প্রকল্পের অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং দ্রুত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও বেশি সহায়তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে। নমনীয় বা স্বল্প সুদের ঋণ ও সহায়তা পেতে জোর লবিং করা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনাকে মজবুত করতে হার্ডটার্ম বা অনমনীয় ঋণও নেওয়ার পরিধি বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা ডলার সংকট কাটছে না। রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রেও আশাব্যঞ্জক কিছু দেখা যাচ্ছে না। আবার আমদানি ব্যয়ও কমানো যাচ্ছে না। এতে ডলারের ঘাটতি থেকে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে বড় ধরনের বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য অনেক দিন পর আবার অনমনীয় ঋণের দিকে ঝুঁকছে সরকার বলে জানিয়েছেন ইআরডির এক কর্মকর্তা।
ডলার সংকট সামাল দিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ঋণের অর্থছাড় দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। ফলে বাজারে ডলার সংকট কমবে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের যথাযথ ব্যবহার সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ মুহূর্তে বিদেশি সহায়তার অর্থ ছাড় করা বেশি জরুরি। কেননা ডলার সংকট কাটাতে ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নাই। বিদেশি ঋণের প্রবাহ বাড়লে দেশে ডলারের প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের বৈদেশিক ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে ইআরডির তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থছাড়ের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) তারা ১৪০ কোটি ডলার ছাড় করেছে। অর্থছাড়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে জাপান। আলোচ্য সময়ে দেশটি দিয়েছে ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে রাশিয়া ও চীন। এই দুটি দেশ ছাড় করেছে যথাক্রমে ৮০ কোটি ৭০ লাখ ডলার ও ৩৬ কোটি ডলার।
অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের হিসাবে সার্বিকভাবে ঋণের ছাড় আগের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি। ইআরডি সূত্র বলছে, জুলাই-মার্চ সময়ে সব মিলিয়ে ৫৬৩ কোটি ডলার এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫৩৬ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তবে বিদেশি ঋণ ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। গত ৯ মাসে ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলো ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ৭২৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থঋণ ও অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৩০৭ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এটা এমন একটা সময় যেখানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার খরচ অনেক বেশি অথচ সে হারে আয় হচ্ছে না। আবার অনেক আগে থেকেই চলতি হিসাবের ঘাটতিও চলে আসছে। ফলে এই মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।