সংগীতযাত্রার শুরু থেকে যারা পাশে ছিলেন তাদের কথা মনে পড়ছিল
প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার হাতে উঠল ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ পদক। সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে এই পুরস্কার নেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত ছিলেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা দেশ-বিদেশের নানা সম্মাননায় সম্মানিত হয়েছেন। এর আগে ২০১৭ সালে ভারত সরকার তাকে বঙ্গভূষণ পদকে ভূষিত করে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার পান বন্যা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদকও অর্জন করেন প্রখ্যাত এই রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। বন্যা প্রথমে ছায়ানট এবং পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। সেখানে শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন ও আশীষ বন্দ্যোপাধায়ের মতো সংগীতজ্ঞদের সান্নিধ্যে আসেন। সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারার’ প্রতিষ্ঠাতা বন্যা রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তার বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ারে যোগ হলো পদ্মশ্রী পদক। পুরস্কারপ্রাপ্তি ও রবীন্দ্রসংগীতের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ
ভারতের পদ্মশ্রী পদক নিয়ে দেশে ফিরলেন। কেমন লাগছে?
খুবই ভালো লাগছে। অসম্ভব রকম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সবাই সময় চাইছে, সময়ই দিতে পারছি না।
দেশ-বিদেশের অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। পদ্মশ্রী পদক যখন হাতে উঠল সেই সময়ের অনুভূতি জানতে চাই।
এটা তো বিরাট সম্মাননা। খুবই ভালো লাগছিল। আমার সংগীতযাত্রার শুরু থেকে যারা আমার সঙ্গে ছিলেন তাদের কথা মনে হচ্ছিল। যারা সব সময় আমার পাশে ছিল, আমার মা-বাবা, গুরুজনরা এবং আমার শ্রোতা-ভক্তরা। ছাত্রছাত্রীরা আমার পরিবারের মানুষ। সবার কথাই মনে হচ্ছিল। সবার একটু একটু সহযোগিতাতেই আজ আমি এ জায়গায় এসে পৌঁছেছি। সবার কনট্রিবিউশন আছে।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
রবীন্দ্রসংগীত ছড়িয়ে দিতে আপনি ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’। তবু যদি বলি, বর্তমানে আপনি কি রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা নিয়ে সন্তুষ্ট?
সন্তুষ্ট কথাটা আপেক্ষিক। রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে। অনেক রকমভাবেই হচ্ছে। কিছু পজিটিভি, কিছু নেগেটিভ থাকে। ভালো কাজও হচ্ছে, আবার কিছু নেগেটিভও হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি মনে করি চর্চা হচ্ছে, এই চর্চাটা হওয়া জরুরি। অনেক বেশি চর্চা হলে তার মধ্যে ভালো কাজও থাকবে।
রবীন্দ্রসংগীত মানেই রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নাম সবার আগে চলে আসে। এরপর খুব বেশি নাম নেই। হাতেগোনা কয়েকজন। এটাকে কীভাবে দেখেন আপনি?
সেটা তো সময়ই বলে দেবে, কাল নির্ধারণ করবে। এটাও তো ঠিক, আমার পরে আবার নিশ্চয়ই স্বাভাবিক নিয়মে কেউ না কেউ আসবে। জায়গা তো খালি থাকে না। জীবনটা হচ্ছে সমুদ্রের মতো। কখনোই খালি থাকে না। আমার অবর্তমানে আবার এই জায়গায় অন্যরা আসবে। নতুন ছেলে-মেয়েদের কাছে নতুন প্রজন্মের শিল্পী গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তোমরা যেটা বলছ, তোমরা আমার প্রজন্মের শ্রোতা। তোমাদের কাছে আমার গান ভালো লাগবে। আগামী প্রজন্মের কাছে আবার আগামী প্রজন্মের শিল্পীর গান ভালো লাগবে। যেমনÑ আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমার গান ভালো লাগত না। তাদের সময়ের যারা শিল্পী ছিলেন, তাদের গান ভালো লাগত। এটাই তো জীবনের ধারা।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
এ সময়ের শিল্পীদের গান শোনা হয়। তারা কেমন করছে?
অনেক ছেলে-মেয়ে ভালো গাইছে। দেশের বাইরের কিছু ছেলে-মেয়ে আছে, ইউটিউবে তাদের গান শুনি। আমার খুবই ভালো লাগে। ওরা হয়তো এখানেই শিখছে, কিন্তু বাইরে গিয়ে চর্চা করছে। সুন্দর গলা। আমাদের এখানে ইয়াং ছেলে-মেয়েরা খুব ভালো করছে। আমার ছাত্রছাত্রীরাই আছে, খুব ভালো গাইছে। আমি তাদের মাঝে অনেক সম্ভাবনা দেখি।
আপনার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি। শিক্ষার্থীদের মাঝেও নিশ্চয়ই অনেক অনুপ্রেরণা কাজ করবে।
আশা করি। আমার পুরস্কারপ্রাপ্তিতে ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা