পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: নানক
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, পাট শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যাগুলোর সমাধানে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে। এর ফলে পাট শিল্পের উন্নয়নে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করাও সহজ হবে। আজ বুধবার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিজেএমএর চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শমী কায়সার, প্রাক্তন ও নবনির্বাচিত পর্ষদ পরিচালকরা এবং পাট ও পাট পণ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
নানক বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি এ খাতে বেশ কিছু সমস্যা দেখতে পেয়েছি। যেমন পাট বীজের মাত্র এক তৃতীয়াংশ দেশে তৈরি হয়। বাকি তিন-চতুর্থাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যা দুঃখজনক। আমি জানতে পারলাম পাট গবেষণা কেন্দ্র পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান নয়। এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। এরকম হাজারো সমস্যার কারণে পাটশিল্পে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। জুট কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে এ সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী বলেন, ‘আজ বিজিএমের সদস্যরা ৫০ কেজি চালের বস্তা যেগুলো পলিথিন বা প্লাস্টিকের তৈরি তা নিষিদ্ধের দাবি করেছেন। শুধু ৫০ কেজির বস্তা নয়, আমরা সব ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু গায়ের জোরে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে করলে সেটা ঠিক হবে না। গ্রাহকের হাতে বিকল্প দিতে হবে। গত মাসে ডিসি কনফারেন্সে আমি জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি রমজান মাসের পর প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধ করে পাটের ব্যাগ কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে। ইতোমধ্যে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্য তৈরির জন্য ড. মোবারক সাহেবকে আমরা ১০০ কোটি টাকার তহবিলের ব্যবস্থা করেছি এবং এ খাতে আরও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বার বার বলেছেন, ‘‘পাট ও চামড়া শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে পোশাক শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে”।’
অনুষ্ঠানে বিজেএমএয়ের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যরা মন্ত্রীর কাছে পাটশিল্প খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। মন্ত্রী তাদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে বলেছি ২৮২টি বহুমুখী পাটজাত পণ্যের তালিকাটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। তাহলে রপ্তানিকারকদের বহুমুখী পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেতে সুবিধা হবে। পাটশিল্পের বকেয়া ঋণ সুদ-আসলসহ একটি হালনাগাদ তারিখভিত্তিক ব্লক হিসেবে স্থানান্তরের বিষয়ে ২ বছরের মরাটোরিয়াম সুবিধাসহ ১০ বছরে পরিশোধ এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের পরিবর্তে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় নিশ্চিত করার জন্য আমি সচিব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাঁচা পাটের ওপর ২ শতাংশ উৎসে কর, প্রতিবেশী দেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ রহিতকরণ, ২ শতাংশ সরল সুদে পাটশিল্পের কাঁচামাল কেনার জন্য দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটি জুট সেক্টর উন্নয়ন তহবিল গঠন, কাঁচাপাটের পাশাপাশি পাটজাতপণ্যকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটির প্রজ্ঞাপন জারি, পাটকলগুলোর পুরাতন মেশিনারি স্থানান্তরের জন্য সরকারিভাবে অন্তত ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তার বিষয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে পাটজাত পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পাটশিল্প খাতকে যাতে গার্মেন্টসের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় এবং গার্মেন্টস শিল্পের মতো উন্নত করা যায় সে বিষয়েও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?