নিখোঁজের ২৫ দিন পর নদী থেকে ছাত্রলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৫৭
শেয়ার :
নিখোঁজের ২৫ দিন পর নদী থেকে ছাত্রলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার

কিশোরগঞ্জে রমজানে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়ার (২৫) গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন আটকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নরসুন্দা নদীর লেকসিটি এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল

এর আগে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের ব্যবহৃত লুঙ্গি, ভাড়া বাসার চাবি ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

মোখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়া জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওরজোর ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন মোখলেছ। এ ছাড়া জেলা জজ আদালতের একজন পেশকারের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ নিখোঁজের ঘটনায় তার বন্ধুসহ চারজনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে জানিয়েছিলেন তার বন্ধু। এ তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার থেকে নরসুন্দা নদীর লেকসিটি এলাকায় তার মরদেহের সন্ধানে অভিযান চলছিলো। আজ দুপুরে পুনরায় অভিযানে নামে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

মোখলেছ জেলা শহরের হারুয়া বৌ বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরায় গত ২৯ মার্চ সর্বশেষ মোখলেছকে দেখা যায়।

নিখোঁজ মোখলেছের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ পাগলা মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ৩১ মার্চ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।’  

সিসিটিভি ফুটেজের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হারুয়া টপ টেনের দোকান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। পাগলা মসজিদ থেকে তারাবিহর নামাজ পড়ে মোখলেছ বাসায় যাচ্ছিল। সে যে বাসায় থাকত তার কাছাকাছি একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে, ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মিজান (মোখলেছের বন্ধু) হেঁটে বাসায় ফিরছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে মিজান। অথচ সে হারুয়া এলাকায় থাকে না। পরে গত ১৬ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মিজান ও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করি।’

নিহতের ভাই বলেন, মোখলেছ ও মিজান বন্ধু। মোখলেছ নিখোঁজের পর মিজানকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি, বরং মিজান তাকে এড়িয়ে চলছিলেন। পরে পুলিশ মোখলেছের ভাড়া বাসার পাশের সিসিটিভির ফুটেজ অনুসন্ধানে দেখতে পান ওই দিন মিজানকে ওই এলাকায় দেখা যায়।

এদিকে, নিখোঁজের দিন সিসিটিভি ফুটেজে মোখলেছের বন্ধু মিজানকে দেখা যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার পরিবারের চারজনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন মোখলেছের বন্ধু মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ফুলপুর গ্রামের মিজান শেখ (২৮), তার বাবা শেফুল শেখ (৬৫) ও মিজানের দুই ভাই মারজান শেখ (২৬) ও রায়হান শেখ (২১)। গত শনিবার তাদের আটক করা হয়।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, আটকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল সোমবার থেকে উদ্ধার অভিযান চলছিল। আজ বিকেল ৪টার দিকে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মোখলেছ নিখোঁজের পর একটি সাধারণ ডায়েরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। পরে নিখোঁজের পরিবার থেকে অপহরণের মামলা করা হয়। এর ভিত্তিতে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করেন।’

এসপি আরও বলেনন, আটক মিজানের বক্তব্য অনুযায়ী মোখলেছকে হত্যা করে নরসুন্দা নদীর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল থেকে সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অবশেষে আজ বিকেলে মরদেহ উদ্ধার হলো। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।