সত্যজিৎ রায়ের সেরা ৫ সিনেমা

বিনোদন সময় ডেস্ক
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সত্যজিৎ রায়ের সেরা ৫ সিনেমা

উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯২ সালের এই দিনে হৃদযন্ত্রের জটিলতায় পরপারে পাড়ি জমান তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি সত্যজিৎ একাধারে ছিলেন চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক ও লেখক। মৃত্যুবার্ষিকীতে নির্মাতার সেরা ৫ সিনেমার খবর এই আয়োজনে তুলে ধরা হলো...

পথের পাঁচালী

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘পথের পাঁচালী’ সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট। অভিনয় করেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, রুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরা সেই অর্থে জনপ্রিয় ছিলেন না। অন্য কুশলীরাও যথেষ্ট অনভিজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছবিটি সমালোচক ও দর্শকদের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। শুধু তা-ই নয়, এটি স্বাধীন ভারতে নির্মিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৫৬ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কার লাভ করে। ফলে সত্যজিৎ রায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ‘পথের পাঁচালী’ ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিচার ফিল্ম ও ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিচার ফিল্ম বাংলাসহ ১৭টি দেশের আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়।

অপরাজিত

১৯৫৫ সালে যখন ‘পথের পাঁচালী’ প্রথম মুক্তি পায়, তখনো সত্যজিৎ রায় কোনো সিক্যুয়াল বানানোর কথা ভাবেননি। ‘পথের পাঁচালী’র ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর অপু চরিত্রটি নিয়ে আরও কাজ করার কথা মাথায় এসেছিল নির্মাতার। তারই ফলে নির্মিত হয়েছে ‘অপরাজিত’। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের শেষ অংশ এবং ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের শুরুর এক-তৃতীয়াংশের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘অপরাজিত’ সিনেমাটি। দেশে ‘অপরাজিত’ সিনেমাটি ‘পথের পাঁচালী’র মতো জনপ্রিয়তা লাভ না করলেও দেশের বাইরে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। পরিচালক মৃণাল সেন আর ঋত্বিক ঘটকের মতে, সত্যজিতের অন্যতম সেরা কাজ ‘অপরাজিত’ সিনেমাটি। এটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে দু-দুটি পুরস্কার পেয়েছে। অভিনয় করেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনাকী সেনগুপ্ত, স্মরণ ঘোষাল প্রমুখ। মুক্তির সাল ১৯৫৬।

অপুর সংসার

১৯৫৯ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। এটি অপু ট্রিলজির শেষ সিনেমা। ওই বছর ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া ১৯৬০ সালে অর্জন করে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট পুরস্কার। সৌমিত্র এবং শর্মিলা এই সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। অপু আইএ পাস করেছে বটে, কিন্তু চাকরি এখনো জোটাতে পারেনি। সেই চাকরির সন্ধানে কলকাতায় ভাড়া বাড়িতে থেকে টিউশনি করে সে পেট চালায়। প্রথম দৃশ্যে অপুকে নিজের কলেজের এক শিক্ষকের কাছে চারিত্রিক সনদপত্র নিতে যায়। বাড়িওয়ালা বকেয়া ভাড়া চাইতে এলে তার সঙ্গে পাক্কা শহুরে লোকের মতো ঝগড়া করে। নিশ্চিন্দিপুরের সেই সরল গ্রাম্য বালক এখন পুরোপুরি কলকাতার নাগরিক। বাড়িওয়ালা ভাড়া না পেয়ে তাকে বিদায় করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যাওয়ার সময় ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে গেলে অপু ওই বাতিসহ বাইরেরটাও জ্বালিয়ে দেয়। তার পর আবার নির্বিকারে দাড়ি কামানোয় মন দেয়।

নায়ক

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সত্যজিৎ বেছে নিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, রবিঠাকুর কিংবা পরশুরামের বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসকে। তবে ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নায়ক’ গল্পের রচয়িতা নির্মাতা নিজেই। সিনেমার কাহিনি এবং চিত্রনাট্যও তিনিই রচনা করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে শ্রেষ্ঠ বাংলা কাহিনিচিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে ‘নায়ক’। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে উত্তম কুমার এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায় বিএফজে পুরস্কার লাভ করেন। সিনেমার প্রধান চরিত্র বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার অরিন্দম মুখোপাধ্যায় (উত্তম কুমার) একটি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তির পর তা গ্রহণের জন্য রেলপথে কলকাতা থেকে দিল্লির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। ট্রেনের রেস্তোরাঁ কারে অরিন্দমের সঙ্গে অদিতি সেনগুপ্ত (শর্মিলা ঠাকুর) নামে এক নারী সাংবাদিকের পরিচয় হয়, যিনি আধুনিকা নামে মেয়েদের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। অদিতির কাছে অরিন্দমের ক্যারিয়ারের আগে ও পরের জীবনের গল্পগুলো জানানোর মাধ্যমে সিনেমার গল্প এগোয়।

হীরক রাজার দেশে

‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ মুক্তির ১১ বছর পর ‘হীরক রাজার দেশে’ নামের একটি সিক্যুয়াল তৈরি করেন। রূপকের আশ্রয় নিয়ে ছবিতে কিছু ধ্রুব সত্য ফুটিয়ে তোলা হয়। এর একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, মূল শিল্পীদের সব সংলাপ ছন্দের তালে করা। তবে শুধু একটি চরিত্র ছড়ার ভাষায় কথা বলেননি। তিনি হলেন শিক্ষক। এ দ্বারা বোঝানো হয়েছেÑ একমাত্র শিক্ষক মুক্তচিন্তার অধিকারী, বাদবাকি সবার চিন্তাই নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ। সিনেমার গানগুলোই ছিল মূল আকর্ষণ। ১৯৮০ সালে ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট মিউজিক ডিরেকশন’ এবং ‘আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে’ গানটি ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট লিরিক’ পুরস্কার লাভ করে। হীরক রাজার চরিত্রে অভিনয় করেন উৎপল দত্ত এবং উদয়ন পণ্ডিত চরিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।