জেলায় জেলায় যৌথসভা করবে বিএনপি
নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে জেলায় জেলায় যৌথসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে রাজপথে নানা কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পাঁচ মাস পর রাজধানীতে আলাদা দুটি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী শুক্রবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আরেকটি পহেলা মে মহান মে দিবস উপলক্ষে বড় শোডাউনের শ্রমিক সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঘরোয়া বৈঠক, মতবিনিময়সভাসহ নানা প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
রাজধানীর দুই সমাবেশ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় করতে কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে বিএনপি। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে লিফলেট বিতরণসহ কর্মিসভার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। আজকালকের মধ্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ মে ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে এক হয়ে সোচ্চার হয়ে শুধু রাজপথে নয়, সোচ্চার কণ্ঠে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে। বিএনপি নেতারা জানান, সরকারবিরোধী টানা আড়াই মাসের আন্দোলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি হতাশা আর ঝিমুনি চলে আসে। এর মধ্যে রমজানজুড়ে সারাদেশে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কাছাকাছি যাওয়ার প্রচেষ্টা ছিল। এখন বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি ছাড়াও রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল সালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না- এ বিষয়টি সারাদেশের মানুষকে বোঝাতে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণ মানুষকে বোঝানোর আগে, দলীয় নেতাকর্মীদের বোঝাতে চাইছে বিএনপি। এ জন্য প্রতিটি জেলায় জেলায় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সুপার ফাইভ নেতাদের নিয়ে যৌথসভা করা হবে। জেলার পর থানা, উপজেলা এবং পৌরসভায়ও এই যৌথসভা হবে।
এদিকে আগামী শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ও যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন-উর রশীদ হারুনসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসে ঢাকায় সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
দুই সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে দলের মধ্যে কর্মযজ্ঞ শুরু করা হয়েছে। মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, এই সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তাদের চালমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
অন্যদিকে শ্রমিক দলের সমাবেশ সফল করতে গতকাল নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংগঠনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের নেতারা জানান, ওই দিন তারা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক সমাগম ঘটাতে চাইছেন। মূলত ঢাকার শ্রমজীবী মানুষকে টার্গেট করে এ সমাবেশ করার পরিকল্পনা থাকলেও ঢাকার আশপাশে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ থেকেও নেতাকর্মী আসতে পারে। ঢাকার বিভিন্ন সেক্টরের বাইরে অসংগঠিত বিভিন্ন শ্রমিক ও মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই দিন প্রত্যেক জেলা, মহানগর, শিল্পাঞ্চল ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রমিক দলের ব্যানারে সমাবেশ ও র?্যালি কর্মসূচি পালন করা হবে। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমজীবী মানুষদের ঢাকায় আনার পরিকল্পনা তাদের নেই বলে সংগঠনের নেতারা জানান। মে দিবসের কর্মসূচি ছাড়াও ২ মে শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করবে সংগঠনটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার এখনো আতঙ্কিত। তারা তো জানে জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। ৯৫ শতাংশ জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। সে ‘আমি আর ডামি’, ‘আমরা আর মামু’দের নির্বাচন করেছে। এই যে অবৈধ নির্বাচন, এই যে অবৈধ সরকার- এটা তো চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনো সময় এই গদি বালুর মধ্যে ডুুবে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা