দেশে ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টস আমদানি, ব্যবহার ও বিপণন নিষিদ্ধের দাবি
মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টসের আমদানি, ব্যবহার ও বিপণন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ ও এনভায়রমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি ফাউন্ডেশন)।
আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রশীদ চোধুরী রিপন। সম্প্রতি ওশি ফাউন্ডেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এশিয়া সিটিজেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলফের (ইকো হেলফ) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তিনি এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আমিনুর রশীদ চোধুরী রিপন বলেন, ‘অ্যাসবেস্টস একটি ধূসর রঙের খনিজ যা সহজেই দীর্ঘ নমনীয় ফাইবারে বিভক্ত হয়ে যায় এবং ধূলিকণা হিসেবে শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসে যায়। এটি গুরুতর ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি জানান, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ শ্রমিক অ্যাসবেস্টস সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। অ্যাসবেস্টসের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় বিশ্বের ৬২টি দেশে উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়েছে
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হলেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে অ্যাসবেস্টস এর আমদানি ও ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৩ কেজি অ্যাসবেস্টস আমদানি হয়েছে। যা ২০১৮ সালের অ্যাসবেস্টসের পরিমাণের চেয়ে ৬ গুণ বেশি।’
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গবেষণায় বাংলাদেশে সিমেন্ট শিট, বেবি টেলকম পাউডার, গাড়ির ব্রেক শু ও সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা বিশ্লেষেণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের একটি বড় সিমেন্ট কোম্পানির উৎপাদিত সিমেন্ট শিটে ৫০ শতাংশ ক্রিসোটাইল অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি রয়েছে। গাড়ির ব্রেক শুতে ১৫ শতাংশ ক্রিসোটাইল অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি রয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অবস্থিত জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকার মাটির নমুনা পরীক্ষা করে কোনো অ্যাসবেস্টস পাওয়া যায়নি। তবে এ এলাকার পানি, বাতাস ও ধূলিকণার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন আছে।’
তিনি আরও জানান, ‘একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকৃত সুনির্দিষ্ট ব্রান্ডের বেবি টেলকম পাউডারের নমুনা করে কোনো অ্যাসবেস্টস পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ব্রান্ডের টেলকম পাউডারে অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এ সময় তিনি বাংলাদেশে অ্যাসবেস্টসের অবাধ ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের যে হুমকি তৈরি হয়েছে তা প্রতিরোধে এর আমদানী, ব্যবহার ও বিপণন নিষিদ্ধ করাসহ ৬ দফা সুপারিশ জানান।
সুপারিশগুলো হলো- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ক্রিসোটাইল অ্যাসবেস্টসের ক্ষতিকারক প্রভাব বিষয়ে গবেষণাসহ অন্যান্য যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা; অ্যাসবেস্টসের বিকল্প উপকরণ নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করা; যেসব শ্রমিক অ্যাসবেসটসিস এ আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা; ক্রিসোটাইল অ্যাসবেস্টস যুক্ত সিমেন্ট রুফ শিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন, বিক্রয় ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং শ্রমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন ফারুকী বলেন, ‘অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে একবার কেউ আসলে তার জীবদ্দশায় একবার হলেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের অনেক শ্রমিক অ্যাসবেস্টসের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ও গবেষক আতাউর রহমান।