‘আমার বাবা আমারে রেখে চলে গেছে, বাচ্চাকে এতিম করে’

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) প্রতিনিধি
১২ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৯
শেয়ার :
‘আমার বাবা আমারে রেখে চলে গেছে, বাচ্চাকে এতিম করে’

‘বাবা গো, আমার বাবা আমারে রেখে চলে গেছে। আমার বাবা ফ্যামিলিসহ চলে গেছে। আমার বাবা, অসুস্থ বাবা-মা রেখে চলে গেছে। একটা বাচ্চাকে (ছেলে) এতিম করে রেখে চলে গেছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত লুৎফর রহমানের মা মোছা. হালিমা খাতুন।

প্রতি বছর ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের মো. উহির আলীর ছেলে মো. লুৎফর রহমান। তিনি গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত মঙ্গলবার স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ রওনা দিয়েছিলেন তিনি। তাদের মধ্যে তিনজনের মরদেহ বাড়িতে এসেছে। আরেকজন এসেছে আহত হয়ে।

লুৎফর রহমান (৩০), তার স্ত্রী শাহনাজ (২৫) ও শিশু সন্তান মাহিত (২) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। লুৎফরের সাড়ে চার বছরের ছেলে মুজাহিদ আহত হয়েছে।

নিহত লুৎফর রহমানের ভাতিজা শামিম ইসলাম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ল্যাংড়াবাজার এলাকায় টাঙ্গাইলগামী বাসের ধাক্কায় মাহেন্দ্র থ্রি হুইলার দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে আমার চাচাতো ভাই মাহিত এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাচা-চাচি মারা যান। অপর চাচাতো ভাই মুজাহিত আহত হন। আমার দাদা-দাদি এমনিতে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। এর মধ্যে এমন ঘটনায় তারাও দুমরে-মুচড়ে গেছে। তাই আমাদের পরিবারে এবার ঈদের আনন্দ নেই। উৎসবের কোনো রংই ছুঁতে পারে নাই এই পরিবারের সদস্যদের।’

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান, সন্তানের স্ত্রী ও নাতি হারানোর শোকে একটি টিনসেড ঘরে আহাজারি করছেন মোছা. হালিমা খাতুন। পাশে কাঁদছেন স্বজনরাও। বাড়ির পাশেই ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতির কবরের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে নির্বাক তাকিয়ে বসে আছেন লুৎফরের বাবা মো. উহির আলী। কবরস্থানটি বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজ করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

মো. উহির আলী বলেন, ‘আমার পাঁচজন ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সব ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী-শিশু সন্তানসহ এ পৃথিবী থেকে আল্লাহ নিয়ে গেছে। এই ছেলেই আমার ও আমার স্ত্রীর ভরণপোষণ করত।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জহির আলী বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে শ্বাসকষ্টের রোগী। গত মাসে নতুন করে হাঁটুতে ব্যথা শুরু হয়েছে। লুৎফরকে জানানোর পরে সে ঈদে বাড়িতে এসে আমাকে ডাক্তার দেখাতে চেয়েছিল। আমার ছেলে বাড়িতে ঠিকই আসল, কিন্তু জীবিত নয় লাশ হয়ে। আমার সব শেষ।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আব্দুর রকিব বাদশা বলেন, এক দিনে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। এ ঘটনায় এই পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।