‘ছেলের কত আশা ছিল ঈদকে ঘিরে, আল্লাহ কেন এমন করল’

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
০৮ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১০
শেয়ার :
‘ছেলের কত আশা ছিল ঈদকে ঘিরে, আল্লাহ কেন এমন করল’

আমার ছেলের কত আশা ছিল এই ঈদকে ঘিরে। সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ করার কথা ছিল, কিন্তু ছেলে এখন হাজার-হাজার মাইল দূরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। আল্লাহ কেন এমন করল?

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সাধারণ নাবিক (ওএস) জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান।

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমার বুকের মানিক ডাকাতদের হাতে বন্দী। আপনারা তাকে তাড়াতাড়ি আমার বুকে ফিরিয়ে দেন। তাকে বিপদে রেখে আমরা কীভাবে ঈদ উদযাপন করব। আমার ছেলের কত আশা ছিল এই ঈদকে ঘিরে। কিন্তু আল্লাহ কেন এমন করলো তা জানিনা। ভাগ্যের কি পরিহাস ছেলে আমার হাজার-হাজার মাইল দূরে দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে।’

গত ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সংবাদের প্রতিক্ষায় সময় পার করছেন জয়ের পরিবার। সন্তানকে ফিরে পেতে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে সময় পার করছেন তারা। আর মাঝে মধ্যেই ছেলের ছবি দেখছেন। প্রতিক্ষার প্রহর যেন তাদের শেষ হচ্ছে না। তারা চান ঈদের আগেই যেন তার সন্তানের মুক্তি মেলে কিন্তু সেই সম্ভাবনা কিছুদিন আগে থাকলেও জাহাজ কর্তৃপক্ষ এখন বলছে ঈদের পরে হবে। 

জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর জয়ের ভাগ্যে কী ঘটছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ ও আমেজ নেই তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে। সোমালিয়ান দস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান এবং রোজিনা বেগম দম্পতির বড় সন্তান জয় মাহমুদ।

অশুসিক্ত কণ্ঠে জয়ের মা রোজিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কিছুই হয়নি। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদে ফিরে আসার অপেক্ষা করছি আমরা। তাড়াতাড়ি আমার বুকের মানিক বুকে ফিরে আসুক সেই কামনা করছি। মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হলে ছেলে বলছে সে ভালো আছে তবে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। আর জাহাজ কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা চেষ্টা করছে ফিরিয়ে আনার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই আমরা। সরকার যেন ঈদের আগেই আমার ছেলেসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সেই দাবি ও অনুরোধ করছি। ছেলেকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছে না।’

জয়ের একমাত্র ছোট্ট বোন বলেন, ‘ঈদের আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ হবে যদি ভাইকে ফিরে পেতাম, কবে ফিরবে কিছুই জানি না। সরকার যেন তাড়াতাড়ি আমার ভাইকে ফিরিয়ে আনে। খুব চিন্তার মধ্যে আমাদের পরিবার দিন রাত পার করছে। যা বলে বোঝাতে পারবো না। আমরা আর এমন কষ্ট আর সইতে পারছি না।’