কেজরিওয়ালের জানা অজানা গল্প
সপ্তাহখানেক আগে আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। জানা যায় কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দেশের ইতিহাসে এই প্রথম পদে থাকাকালীন কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করলেন। তার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আমাদের আজকের আয়োজন কেজরিওয়ালের রাজনীতির শুরু, উত্থান, পতনসহ নানা ঘটনা নিয়ে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম অভি
কেজরিওয়ালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কেজরিওয়াল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৮ সালের ১৬ আগস্ট। কৃষ্ণের মতো তিনিও জন্মাষ্টমীর দিনেই জন্মেছেন বলে দাবি করেন কেওজরিওয়াল। কংসের বংশ ধ্বংসের দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টিকর্তা তাকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন এমন দাবিও তিনি করেছেন বহুবার। গোবিন্দ রাম কেজরিওয়াল এবং গীতা দেবীর ঘরে ভূমিষ্ঠ হন কেজরিওয়াল। ভারতের হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার সিওয়ানিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা ছিলেন একজন বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী, যিনি বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, মেসরা থেকে স্নাতক পাস করেছিলেন। কেজরিওয়াল তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন উত্তর ভারতের শহর সোনিপাত, গাজিয়াবাদ এবং হিসারে। তিনি হিসারের ক্যাম্পাস স্কুলে এবং সোনিপাতের হলি চাইল্ড স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি আইআইটি-জেইই পরীক্ষা দেন এবং অল ইন্ডিয়া র?্যাঙ্ক (এআইআর) ৫৬৩ স্কোর করেন। তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি খড়গপুর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে যা করতেন কেজরিওয়াল
ক্যারিয়ারের শুরুতে রাজনীতিতে আসার কোনোরকম পরিকল্পনা ছিল না অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। বরাবরই বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। আইআইটি খড়গপুর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তিনি। এর পর টাটা স্টিল সংস্থায় প্রথম ইন্টারভিউতে তার চাকরি হয়নি। দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে বসার কোনো ইচ্ছা ছিল না কেজরিওয়ালের। পারিপার্শ্বিক চাপে তিনি শেষ পর্যন্ত আবার ইন্টারভিউ দেন। সেবার অবশ্য সফল হন তিনি।
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা
চাকরিতে থাকাকালীন অবস্থায় প্রথমবার মাথায় সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা জন্মায় কেজরিওয়ালের। এর পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথমবার বসেই সফল হন তিনি। কলকাতার কালীঘাটে মাদার তেরেসার নির্মল হৃদয় আশ্রমে গিয়ে মন পরিবর্তন হয় তার। ১৯৯৫ সালে আইআরএস হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার আগে তিনি নির্মল হৃদয় আশ্রমে দুমাস কাজ করেছিলেন। আইআরএস হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি সমাজের বিভিন্ন অংশে চলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সরব হতে শুরু করেন। এর পর তিনি দিল্লির একটি সংস্থা ‘পরিবর্তন’-এ যোগদান করেন। পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে, সামাজিক প্রকল্পে, আইটি দপ্তর এবং বিদ্যুৎ দপ্তরে চলা দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করে এই সংস্থার জন্য আন্দোলন শুরু করেন কেজরিওয়াল।
রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ
২০০৬ সালে আয়কর বিভাগের জয়েন্ট কমিশনার পদ থেকে ইস্তফা দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০১০ সালে তিনি আন্না হাজারের শিষ্য হিসেবে আন্দোলন শুরু করেন। জন লোকপাল বিলের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিবাদ আন্দোলন। তখনো ধারণা ছিল না রাজনীতিতে ঠিক কী কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। প্রাক্তন এই আইআরএস অফিসার যদিও আন্না হাজারের গান্ধীবাদী নীতিতে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। আন্না হাজারের আন্দোলনের সঙ্গে একমত হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তিনি ২০১২ সালে নিজের তৈরি দল গড়ে তোলেন। দলের নাম দেন আম আদমি পার্টি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার নেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময় নিজের দল নিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে পা দেন কেজরিওয়াল। ঝাড়ু প্রতীক এবং লাল মাফলারে অরবিন্দ কেজরিওয়াল খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতের ‘আম আদমি’ হয়ে ওঠেন। শিলা দীক্ষিতকে হারিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি গোটা দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাজনীতিতে আয়নপ্রকাশ ঘটে দ্য মাফলারম্যানখ্যাত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।
আরও পড়ুন:
ভারতে ফেরার পথে প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর
৪৯ দিনের মুখ্যমন্ত্রী!
৪৯ দিন পদে থাকার পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। জানা যায়, তার মাফলারের অবতার এখনো ভারতে লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়। এর পর ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আম আদমি পার্টি আবারও ক্ষমতায় আসে। ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন জিতে কেজরিওয়ালের দল। এর পর ইডির হাতে গ্রেপ্তারের পরও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা নেননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
যে কারণে গ্রেফতার কেজরিওয়াল
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আবগারি নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) করা মামলায় আইনগত নিরাপত্তা চেয়ে কেজরিওয়ালের আবেদন দিল্লি হাইকোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর গেল সপ্তাহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১-২২ সালে দিল্লি সরকার ওই আবগারি নীতি প্রণয়ন করেছিল। পরে এ নীতি বাতিল করা হলেও এ নিয়ে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। মামলায় ইতোমধ্যে আম আদমি পার্টির নেতা মনীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইডির দাখিল করা চার্জশিটে কেজরিওয়ালের নাম একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অন্য অভিযুক্তরা আবগারি নীতি প্রণয়নের জন্য কেজরিওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে। কেজরিওয়াল এর আগে এ মামলায় ইডির একাধিক সমন এড়িয়ে গিয়েছিলেন।