হঠাৎ গরম ব্রয়লারের বাজার
সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তা মানা হচ্ছে না। আসন্ন ঈদ ঘিরে পণ্যটির দাম এক লাফে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে ব্রয়লারের কেজি এখন ২৪০ টাকায় ঠেকেছে। অথচ গত সপ্তাহের শুরুতে ২১০ টাকা; এমনকি ২০৫ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় হতবাক সাধারণত ক্রেতারা।
মালিবাগ এলাকায় বসবাস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এহসানুল হক। তিনি বলেন, কিছু দিন আগেও তো ২০৫ টাকা কেজি কিনলাম। আজ (শনিবার) এসে দেখি ২৪০ টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব? এটা তো ডাকাতি। এগুলো দেখার কি কেউ নেই?’
খুচরা বিক্রেতাদের হিসাব বলছে, মাত্র দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লারের কেজিতে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল যে ব্রয়লারের কেজি ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে, তিন দিন আগে তা ২০৫ টাকা।
মালিবাগ বাজারের মুরগির খুচরা বিক্রেতা মো. ফারুক হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে ব্রয়লারের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে। তিন দিন আগে ২১০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি করছি। কাপ্তানবাজার থেকে কেনা পড়েছে ২২২ থেকে ২২৫ টাকা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
কদমতলী এলাকার সাদ্দাম মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা মো. শাখাওয়াতও বলেন, সাধারণত ঈদের দিন খাবারের আয়োজনে সবার বাড়িতে মুরগির মাংসের নানা পদ থাকে। এ জন্য চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু সরবরাহ সেভাবে বাড়েনি। তাই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে।
রাজধানীর কাপ্তানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই দিন ধরে প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২১৮ থেকে ২২২ টাকা কেজি পর্যন্ত। বড় আকারের মুরগির ক্ষেত্রে দামের তারতম্য রয়েছে। তারাও বলছেন, সরবরাহ আগের মতোই আছে। কিন্তু চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। তাই বাজার চড়া।
গত ১৫ মার্চ ব্রয়লার ও সোনালি মুরগিসহ ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)। সরকারের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য অনুযায়ী প্রতিকেজি ব্রয়লার পাইকারি পর্যায়ে ১৬২ টাকা এবং খুচরায় ১৭৫ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। তবে এতদিনেও ব্রয়লারের বাজারে এ মূল্যের কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো ঈদের বাজারে দাম আরও বাড়ল।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বাজারে সুশাসনের অভাব থাকায় মূল্য নিয়ে এমন পরিস্থিতি চলছে বলে মনে করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, যে কোনো উৎসব এলেই ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে বেশি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। অথচ যৌক্তিক এ মূল্যের বাস্তবায়ন হলে ভোক্তারা উপকৃত হতো।
সরকার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন প্রান্তিক খামারিরা। তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, পোলট্রি খাতে কিছুই বদলায়নি। আগের সিস্টেমে চলছে। করপোরেটরা নানা কায়দায় একদিনের বাচ্চা, মুরগি, ডিম ও ফিডের বাজার নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণ করছে।
সুমন জানান, আমাদের হিসাবে ব্রয়লারের একদিনের বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৬ টাকা প্রতি পিস। অথচ করপোরেটদের হিসাবে তা ৪৩ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এটা আরও বাড়িয়ে ৬৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তার পরও এ দামে বাচ্চা পাওয়া যায় না। আমাদের বাচ্চার পিস কিনতে হয় ৮০ টাকা দরে। একইভাবে কোম্পানির ফিডের হিসাবেও গরমিল আছে। এই ধরনের ভুল তথ্যের ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
তবে খামারিদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মাঠপর্যায়ে খামারিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে উৎপাদন খরচ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কোনো ত্রুটি নেই।