ছাত্র রাজনীতির ধরন পাল্টাতে হবে: সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান

অনলাইন ডেস্ক
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৫
শেয়ার :
ছাত্র রাজনীতির ধরন পাল্টাতে হবে: সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান

বুয়েট অধ্যাদেশ ও নীতিমালা কি হবে তা নির্ধারণ করার অধিকার বুয়েট কতৃর্পক্ষের রয়েছে। বুয়েটের ছাত্ররা ক্লাস করবে, পরীক্ষা দিবে, যখন রাজনীতির প্রয়োজন হবে তখন রাজনীতিতে অংশ নেবে, এমন পরিবেশই প্রয়োজন। বুয়েটের ছাত্র সংসদ সবসময় তাদের মতো করেই হয়, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়। বর্তমান সমস্যার সমাধান ছাত্র—শিক্ষকসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন ডাকসু সাবেক ভিপি ও গাজীপুর-৫ কালীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামান। 

গত শনিবার ঢাকার এফডিসিতে বুয়েটের চলমান অস্থিরতা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

ডাকসু সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান বলেন, ‘গত ৫ বছরে রাজনীতিমুক্ত বুয়েটে অনেক সফলতা যেমন রয়েছে তেমনি অতীতে রাজনীতি চলমান রেখেও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। আমরা ছাত্র সংসদ চাই, কিন্তু মারামারি হানাহানির ছাত্র সংসদ চাইনা। ছাত্র রাজনীতি মানে শুধুমাত্র কয়েকটি স্লোগান নয়। ছাত্র রাজনীতির ধরণ পাল্টাতে হবে। বর্তমান ছাত্রদের রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিৎ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্ব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর হলের সিট প্রদানের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে দলীয় কর্মী হিসেবে মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণে বাধ্য করা খারাপ দৃষ্টান্ত। বর্তমান ছাত্র রাজনীতির ধারা কি হবে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদও অবদান রাখতে পারে।’

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘আদালতের আদেশে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে, নাকি বুয়েট কর্তৃপক্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে আদালতে তুলে ধরবেন তা বুঝতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না তা আদালতে তুলে ধরার পূর্বে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভোটের আয়োজন করতে পারেন। উক্ত ভোটের ফলাফল আদালতে তুলে ধরা হলে আমরা আশা করি বুয়েটের চলমান সংকটের একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। তবে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে ও ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে বুয়েটে অরাজনৈতিক স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠন করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির এক ঐতিহ্যময় ইতিহাস রয়েছে। বায়ান্ন, উনসত্তর, সত্তর, একাত্তরসহ নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে এই ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছিল। যে নেতৃত্বের সঙ্গে জাতীয় নেতৃত্বও একাত্বতা প্রকাশ করেছিল কিন্তু এখন কেন এমন হলো। এখন কেন ছাত্র রাজনীতি বলতে ক্ষমতার দাপট, হল দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, যৌন নিপীড়ন, খুনাখুনি। এখন কেনো ছাত্র রাজনীতি বলতে গাড়ি, বাড়ি, প্রতিপত্তি, আরাম-আয়েশ, তদবির। ছাত্র রাজনীতির পদ-পদবী পেতে এখন কেনো মেধার গুরুত্ব নাই। এখন কেনো ছাত্র রাজনীতির বড় পদের জন্য আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে কেবল ছাত্র রাজনীতিই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাল-নীল-সবুজ দলে বিভক্ত হয়ে শিক্ষকরাও পক্ষপাতমূলক রাজনীতি করছেন। এখন হলের কোন প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরকে পাওয়া যাবে না যিনি নিরপেক্ষ ব্যক্তি।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ১০ দফা সুপারিশ করেন:-

১) উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত আদালতের কাছে তুলে ধরা 

২) শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার না বানানো 

৩) লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন বা দলীয় পরিচয়ের পরিবর্তে ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন করা 

৪) বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত হত্যাকান্ড, যৌন হয়রানি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিচার দ্রুততম সময়ে করার লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা 

৫) বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাদা-লাল-নীল-বেগুনী ইত্যাদি নামকরণের মাধ্যমে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা 

৬) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং, টর্চার সেল, হল দখল, সিট দখল, আদিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস দমনে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হওয়া 

৭) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের হলে সহাবস্থান নিশ্চিত করা

৮) শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে যোগ্য মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দেয়া 

৯) আসন্ন বাজেটে উচ্চা শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য গবেষণা, বৃত্তি ও কো—কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো 

১০) উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধিকল্পে ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা বাড়াতে হবে। 

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের সহায়ক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মল্লিক, সাংবাদিক মাহবুব কবির চপল ও সাংবাদিক শামীমা সুলতানা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।