‘প্রেক্ষাগৃহে দেখব ছবি এই হোক অঙ্গীকার’

ফয়সাল আহমেদ
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
‘প্রেক্ষাগৃহে দেখব ছবি এই হোক অঙ্গীকার’

নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন জৌলুস হারানো চলচ্চিত্রের এই আঁতুড়ঘর আবার মুখর হবে শিল্পীদের আনাগোনায়। আবার ফিরবে শুটিং। এই আশার মধ্যেই আজ পালন করা হবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। দিবস ঘিরে আয়োজন করেছে এফডিসি কর্তৃপক্ষ। আজ দুপুর দেড়টায় এফডিসির চত্বরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে চলচ্চিত্র দিবসের উদ্বোধন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন খোন্দকার। আমাদের ছবি আমাদের অহংকার, প্রেক্ষাগৃহে দেখব ছবি এই হোক অঙ্গীকার- এই প্রতিপাদ্যে প্রধান অতিথির আগমনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে আর শেষ হবে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন। এত আয়োজন থাকার পরও অভিনয়শিল্পী, পরিচালক বা প্রযোজকদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না আনন্দ। চোখে-মুখে হতাশা। হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। বেশিসংখ্যক সিনেমা নির্মাণ হলে তো এফডিসি ভালো থাকবে। আবার নির্মিত সিনেমা দর্শক দেখলে নতুন করে নির্মাণ হবে সিনেমা। যদিও সিনেমা যেখানে চলবে সেই হলও তো বাড়াতে হবে।

দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপনের চেষ্টা করে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ ঢাকাই সিনেমার সব সংগঠন। অথচ তাদের কথায় হতাশা ছাড়া কিছুই নেই। কারণ সিনেমা নেই, নেই সিনেমা হল। দেশে এক সময় সিনেমা হল চালানো অনেক লাভজনক ছিল। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সে অবস্থা এখন নেই। অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। যারা টিকে আছে তাদের ‘শো’ চালিয়ে লাভ দূরে থাক, আসলই উঠছে না। সিনেমা হলের এ দৈনদশা কাটাতে নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকারের পরামর্শে সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিল গঠনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাড়াই পাওয়া যায়নি। ’৯০-এর দশকে সিনেমা হলের ব্যবসা ছিল চাঙ্গা। দেশে তখন প্রায় ১৪শ সিনেমা হল ছিল। তবে দর্শকপ্রিয় সিনেমা তৈরি না হওয়াসহ নানা কারণে ধীরে ধীরে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। বেশিরভাগ সিনেমা হল বন্ধ করে কোথাও মার্কেট, কোথাও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সারাদেশে চালু সিনেমা হলের সংখ্যা নেমেছে ৫০-এর নিচে। অনেক জেলায় একটি হলও চালু নেই- এমন বাস্তবতাও রয়েছে। প্রযোজক ও পরিবেশকদের কথা- একটি নতুন ছবি মুক্তির সময় বেশি হল পেলে প্রথম সপ্তাহেই লগ্নির বড় অঙ্ক উঠে আসা সহজ হয়; কিন্তু হল সংকটের মধ্যে একাধিক নতুন ছবির মুক্তির কারণে সেই সুযোগ থাকছে না। পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পর তা প্রদর্শন করা। সিনেমা তৈরি, পরিবেশনা বা প্রচারণা সবই ঠিক আছে। কিন্তু প্রদর্শনের জায়গায় সমস্যার কারণে আমরা নানামুখী সমস্যা মোকাবিলা করছি। বাংলাদেশে হলের সংখ্যা কমে গেছে এটা ঠিক। কিন্তু হল নেই তা বলা যাবে না। হল আছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি।’ চলচ্চিত্র পরিচালক মতিন রহমান বলেন, ‘এক সময় ভালো সিনেমার অভাবে হলগুলো চলেনি। এর পর করোনা মহামারীতে অনেক দিন হলগুলো বন্ধ ছিল। হতাশ হয়ে অনেক হলমালিক হয় জায়গা বিক্রি করে দিয়েছেন অথবা হল ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন, করছেন। এখন নতুন নতুন সিনেমা আসছে; কিন্তু হল পাওয়া যাচ্ছে না। এই সীমিতসংখ্যক হল দিয়ে তো সিনেমার ব্যবসা হবে না। সিনেমাটা একটা যৌথ শিল্প। একে বাঁচাতে এখন থেকেই হলমালিক ও প্রযোজকদের সিরিয়াস হয়ে একযোগে কাজ করা উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিনেতা বলেন, ‘আমাদের আরও একটি সমস্যা পাইরেসি। এখানে পাইরেসি ঠেকানোর কোনো রাস্তা নেই। একটি সিনেমা একবার পাইরেটেড হয়ে গেলে আর তা হলে চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে একজন প্রযোজককে ডেকে এনে চলচ্চিত্র বানিয়ে তাকে তো আর জেনে-বুঝে পথে বসানো যায় না। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত। এখন ঘরে বসে বিরাট স্ক্রিনে আপনি ঝকঝকে-তকতকে সিনেমা দেখতে পারছেন। আর হলে গেলে তো সেই পরিবেশটা পেতে হবে। সেই পরিবেশটাই বেশিরভাগ হলে নেই। উপযুক্ত পরিবেশ প্রতিটি হলে নিশ্চিত করতে হবে। এটা আনন্দ করার কিছুটা সময়। সেই সময়টা আনন্দঘন করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই সেখানে থাকতে হবে।’ তবে পরিচালক দীপংকর দীপন তুলে ধরেছেন আরও একটি বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমেই চিন্তা করেছি আমার সিনেমার মূল দর্শক কারা হবে। কোন বয়সের দর্শককে আমি সিনেমা হলে আনতে পারব। অনেক মানুষের ভেতরেই সিনেমা হলে যাওয়ার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি দেখেছি যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছর, তাদের এখন সিনেমা হলে আনাটা তুলনামূলক সহজ। তারা দুপুর বা সন্ধ্যায় কিছুটা অবসরে থাকে। এর থেকে বেশি বয়সের যারা, তাদের আরও কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।’