চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি আড়াই মাস ধরে বন্ধ
দীর্ঘ আড়াই মাস (৭৬ দিন) ধরে কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। এতে করে এই অঞ্চলের পণ্য পরিবহন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় নৌপথ ভরাট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নৌকায় যাত্রী বৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ঈদের মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধের পাঁয়তারা করছে একটি সিন্ডিকেট মহল।
এদিকে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতাসহ কুটিরচর এলাকায় পুরাতন বক্স কালভার্টটির বিকল্প রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্যোগে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বিআইডব্লিউটিসি’র দুটি ফেরিতে পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন প্রকার পরিবহন পারাপার করে আসছে। শুস্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নিয়মিত চ্যানেল খননের মাধ্যমে নাব্যতা সংকটকে অতিক্রম করে বিআইডব্লিউটিসি নিয়মিতভাবে ফেরিতে পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার করে আসছিল। ফলে অল্প সময়ে উত্তরাঞ্চলে পণ্যবাহী পরিবহনের জন্য এই রাস্তাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এই পথে প্রতিদিন ৩০-৪০টি পণ্যবাহী পরিবহন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করছিল। প্রায় আড়াই মাস পূর্বে রৌমারী ঘাট থেকে ২ কিলোমিটার পরে কুটিরচর এলাকায় একটি পুরাতন বক্স কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ওই কালভার্টটির জন্য গত ১৩ জানুয়ারি থেকে চিলমারী-রৌমারী ঘাটে ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়। দীর্ঘ সময় পরে কালভার্টের পাশ দিয়ে বিকল্প রাস্তার কাজ শুরু করে এলজিইডি। দীর্ঘ ৭৬ দিনেও কালভার্টের বিকল্প রাস্তার কাজ সম্পন্ন না করায় ফেরি চলাচল বন্ধের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।
আজ রবিবার দুপুরে চিলমারী বন্দর ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে ফেরি বন্ধ থাকায় রাস্তায় পণ্যবাহী কোনো পরিবহন ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি।
স্থানীয় অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বর্তমানে এই পথে কোনো পরিবহন আসছে না। ফেরি চলাচল করলে পারাপার সুবিধা সহ ঈদের মধ্যে বাড়িতে আসা যাত্রীরা অনেক সুফল পেতো।
এ বিষয়ে নৌকা চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরি চলাচল করলে আমাদের সমস্যা নাই তবে ঈদে ফেরি চললে নৌকার যাত্রী কম হয়। তাছাড়া নদীর পানি কম থাকায় আমার মনে হয় এবার ঈদের মধ্যে ফেরি চলাচল করবে না।’
ফেরি কুঞ্জলতার মাস্টার অফিসার রেজাউল করিম জানান, ‘এ বিষয়ে আমাদের কমার্শিয়াল বিভাগের সঙ্গে কথা বলেন। আসলে বিকল্প রাস্তাটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। রাস্তা ব্রিজের সমস্যা সমাধান করা মূলত এক সপ্তাহের কাজ ছিল। তিনি মনে করেন আড়াই মাস সময়ের মধ্যে নদী খনন করে ফেরি চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব ছিল।’
ফেরিঘাট ম্যানেজার (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, ‘আমরা ব্রিজের কাজটি শেষ হওয়ার অবধি অপেক্ষা করছি। ব্রিজসহ রাস্তার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল যাবে না।’
তবে ঈদের আগে ফেরি চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনছুরুল হক বলেন, ‘কালভার্টটির ডাইভারসন রোডের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি দুএকদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং রাস্তা খুলে দেওয়া হবে।’