প্রশ্নটা সহজ উত্তর অজানা
অমানবিকতার গল্প
মানবিকতার ধ্বজা ধরে এগিয়ে যাওয়া সভ্যতার জন্য এ এক চরম অমানবিকতা ও বর্বরতার গল্প। শিশুটির বয়স মাত্র ৭ বছর। এ বয়সে দুরন্তপনায় মেতে থাকার কথা, হাতে থাকার কথা বই-খাতা-কলম। কিন্তু ওর হাত বাঁধা তালাবন্দি শেকলে। হুইলচেয়ারে বসে থাকা দাদার জীবনের সঙ্গে আটকে আছে ওর জীবনও। ‘দাদার পা’ হয়ে হুইল চেয়ার ঠেলা আর মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার জন্য হাত পাতাই ওর কাজ। পালক দাদাকে ছেড়ে যেন পালিয়ে যেতে না পারে এ জন্যই শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে ওকে।
শিশুটির গলায় ঝোলানো একটি কার্ড। সেখানে লেখা- নাম : সাগর চৌধুরী, মাতা : আমেনা বিবি, পিতা : গোলাপ চৌধুরী, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা, জন্মতারিখ: ২ জানুয়ারি ২০১৭, পশ্চিম উকিলপাড়া, ফেনী। আর পালক দাদার নাম ছেরাজুল হক। এই বৃদ্ধ শিশুটিকে দিয়ে ফেনী শহরের অলিতে-গলিতে ভিক্ষা করাচ্ছেন। সাগর যেন পালাতে না পারে, সে জন্য শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে ছেরাছুল-সাগরের ভিক্ষাবৃত্তির দৃশ্য দেখে বিবেকবান মানুষমাত্রই বিস্মিত হয়েছেন। সত্তরোর্র্ধ্ব বৃদ্ধ ছেরাজুল হক জানান, সাগর এতিম। মা-বাবা কেউ নেই। বলেন, আমি তাকে লালন-পালন করে বড় করেছি। সে কথা বলতে পারে না। সে যদি হারিয়ে যায় আমি তাকে কোথায় খুঁজব? সে জন্য শিকল দিয়ে আটকে রেখেছি। সাগরকে নিয়ে তিনি ফেনী শহরের দাউদপুরব্রিজ এলাকায় বসবাস করেন।
শিশু সাগর কথা বলতে পারে না। এ প্রতিবেদকের প্রশ্নে ও জানায়, এভাবে থাকতে ওর ভালো লাগে না।
নাহিয়ান রাসেল নামে প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, এটা তো শিশুর সাথে রীতিমতো অন্যায়। দাদাকে নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ও ক্লান্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে ওকে মুক্তি দেওয়া উচিত।
ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’-এর সভাপতি মনজিলা মিমি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আগে থেকেই অবগত আছি। শিশু সাগরের বাবা জেলে, মা অন্যত্র চলে গেছে। এখন শিশুটিকে বাসাবাড়িতে রেখে আসাও ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুটিকে প্রতিবন্ধী বোর্ডিংয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই। সেখানে প্রচুর টাকা দরকার। এত টাকা দিয়ে কে ওকে সহযোগিতা করবে?
প্রশ্নটা সহজ, উত্তর মেলা ভার।