ক্রেতা আকৃষ্টে সাজসাজ রব
গত তিন বছরের চেয়ে এবার বাণিজ্য বেশি হবে - দোকান মালিক সমিতি
ঈদের কেনাকাটা সেরে নিতে এখন সবাই ছুটছেন মার্কেট পাড়ায়। ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে রাজধানীর কেনাকাটা। বিকাল থেকে বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সন্ধ্যায় ইফতারের পর এ ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন বছর ঈদের মৌসুমে সেভাবে ব্যবসা জমেনি। এবার বাজার অনেকটাই চাঙ্গা। দিনভর ব্যস্ত সময় কাটছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের। ক্রেতার নজর কাড়তেও কোনো কমতি রাখছেন না তারা। বর্ণিল আলোকসজ্জাসহ বিপণিবিতানগুলো সেজে উঠেছে নতুন উদ্যমে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতোমধ্যে পোশাক ও জুতার বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি অলঙ্কার, গৃৃহস্থালি পণ্য সামগ্রীর বাণিজ্যও গতি পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের বাজারে এখনো সেভাবে বেচাবিক্রি বাড়েনি বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন রোজার বাকি দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে।
রাজধানীর নিউমার্কেটসহ আশপাশের গাউছিয়া, চন্দ্রিমা সুপার, চাঁদনী চক, ধানমন্ডি হকার্স, নুরজাহান, ইস্টার্ন মল্লিকার মতো মার্কেটগুলোতে দিনভর ক্রেতাদের আনাগোনা লেগে আছে। ঈদ সামনে রেখে এ এলাকায় সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবারেও মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। বাণিজ্যের হাতছানিতে উচ্ছ্বসিত বিক্রেতা ও দোকান কর্মচারীরাও।
গত সপ্তাহ থেকে ক্রেতার আনাগোনা কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানালেন নিউ মার্কেটে মেয়েদের জামার কয়েকজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার পর থেকে টানা কয়েক বছর ঈদের ব্যবসা হয়নি। এবার সার্বিক পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকায় আরও বেশি ব্যবসার আশা করছি। বিক্রি দ্বিগুণের মতো বেড়েছে। স্বাভাবিক ঈদের মৌসুমে বিক্রি কয়েকগুণ বেশি থাকে। তারপরও যতটুকু বাণিজ্য হচ্ছে তাতে আমরা খুশি।
রোজার প্রথম সপ্তাহের তুলনায় মার্কেটে এখন দ্বিগুণেরও বেশি ভিড় বেড়েছে বলে জানান নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন। তিনি বলেন, নিউ মার্কেটে বিভিন্ন পণ্য মিললেও এখন মূলত থান কাপড়, মেয়েদের ডিজাইন ড্রেস, জুতার বিক্রি বেশি। ঈদের আগ মুহূর্তে সব ধরণের পণ্যের বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটেও ক্রেতার ভিড় ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে বলে জানান মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ। তিনি বলেন, বিক্রি এখনো ততটা বাড়েনি। তারপরও দীর্ঘ সময় বাদে ঈদে ব্যবসার মুখ দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
জামার সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না ও হিজাব কিনতে মা আর বোনের সঙ্গে চাঁদনী চকে এসেছেন আজিমপুরের বাসিন্দা উম্মুল ওয়ারা। তিনি বলেন, ঈদের নতুন জামা কেনা শেষ। এখন ম্যাচিং ওড়না, হিজাব, অলঙ্কারসহ খুঁটিনাটি কেনাকাটা সারছি। আরও কিছু কেনাকাটা রয়েছে ইফতারের পর সারব। কিন্তু দাম এবার বেশি। আরেক ক্রেতা নারিন্দার বাসিন্দা মো. ফয়সাল হোসেনও অভিযোগ করেন, জিন্স প্যান্ট ও শার্টের দাম এবার অনেক বেশি। পছন্দ হলেও দামে মিলছে না।
এ এলাকার ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। জামা, জুতা, হিজাব, অলঙ্কারসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে ফুটপাতে হাঁটাই যেন দায়। তারপরও কেনাকাটায় ঈদের আমেজে আনন্দিত ক্রেতারা। বিক্রি বাড়ায় এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফুটেছে। অনেকে আবার ছড়ার ছলে পণ্যের প্রচার করতে হাঁকডাকও দিচ্ছেন।
এবার ঈদের মৌসুমে ব্যবসায় চাঙ্গা ভাব দেখা যাচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য আনন্দের বলে মনে করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, করোনাকাল থেকে একের পর এক ঈদের বাণিজ্য মন্দা যাচ্ছে। পোশাকসহ ঈদের কেনাকাটা বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য থাকলেও গত ঈদগুলোতে ৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। সেখানে এবার অনেকটা ভালো যাচ্ছে। ধারণা করছি, গত বছরগুলোর থেকে এবার বাণিজ্য বেশি হবে। ১০ শতাংশ বিক্রি বাড়লেও আমরা ব্যবসায়ীরা খুশি। এতে ব্যবসায়ীরা আবারও ব্যবসায় ফিরতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স ও মৌচাক মার্কেটেও ভিড় বেড়েছে। ছুটির দিনগুলোতে ইফতারের সময় এসব এলাকার খাবারের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকছে। ইফতারের পর মার্কেটে ক্রেতার ভিড় আরও কয়েক গুণ বাড়ছে।
মৌচাকের শাড়ি বিক্রেতা মো. হাফিজ বলেন, এবার শাড়ির বিক্রি কম। শাড়িতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে নারীরা। আধুনিক ডিজাইনের নানা নামের ড্রেসে বেশি নজর তাদের।
বসুন্ধরার ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড় আর জুতার শোরুমগুলোতে বেশি ভিড় করছেন ক্রেতা। অন্যান্য পণ্যের দোকানে ভিড় ততটা নেই। একই কথা জানান যাত্রাবাড়ী ইদ্রিস মার্কেটের মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসায়ী মো. সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ঈদের বোনাস দিয়ে অনেকে জামা কাপড়ের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনাকাটা করত। করোনার পর এ চিত্র বদলে গেছে। তবে এবার সাধারণ সময়ের তুলনায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।
রাজধানীর গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া এলাকা ও এর আশপাশে ঢাকা ট্রেড সেন্টার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্সসহ অনেক পোশাকের পাইকারি বাজার রয়েছে। রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এ এলাকার পাইকারি মার্কেটগুলোতেও কর্মব্যস্ততা বেড়েছে।
ঢাকা ট্রেড সেন্টারের পাইকারি ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, করোনা, আগুন আতঙ্ক, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দীর্ঘসময় ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এবার ঈদে ব্যবসা চাঙ্গা হয়েছে। গেঞ্জি, গ্যাবারডিন, জিন্স, পাঞ্জাবি, প্যান্টসহ বিভিন্ন কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। সশরীরে ক্রেতারা আসার পাশাপাশি পণ্য চলে যাচ্ছে কুরিয়ারের মাধ্যমেও।