দামে সস্তা, কমছে না ধূমপায়ী, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
দামে সস্তা হওয়ায় দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমছে না। বরং এই সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি তৈরি হচ্ছে। তামাকমুক্ত দেশ গড়ার যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়নে এটি বড় বাধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ধূমপায়ীদের সংখ্যা কমাতে তাই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এজন্য সিগারেটের দাম বাড়ানো প্রয়োজন, বিশেষ করে নি¤œস্তরের সিগারেটের দাম। কারণ দেশে সিগারেটের ৮০ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেলে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমবে ও রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম অন্যান্য নিত্যপন্যের তুলনায় অনেক কম। যেখানে প্রায় সব ধরনের নিত্যপন্য ১৫ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে, সেখানে নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির সাথে তুলনা করলে আসলে সিগারেটের দাম কমেছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানে দেশে ধূমপায়ীর প্রায় ৮০ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা এবং এরা সবাই নি¤œ আয়ের মানুষ। আর নি¤œ ও মধ্যম স্তর মিলিয়ে সিগারেটের বাজার ৯০ শতাংশ। নিম্নস্তর, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম (প্রতি ১০ শলাকা) যদি ১০ টাকা বাড়ানো হয় তাহলে এই খাত থেকে প্রায় ৪.৫ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব, যার ফলে প্রবৃদ্ধি হবে আনুমানিক প্রায় ১০-১২ শতাংশ।
দেশের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের উৎস সিগারেট। আর সিগারেটের ৮০ শতাংশ যেহেতু নি¤œস্তরের সিগারেটের ভোক্তা তাই এই স্তরের সঠিক মূল্য নির্ধারন করা না গেলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। দেশে কোভিড ও পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকার আইএমএফসহ বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করছে। তবে এই ঋণ পেতে আইএমএফ বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। এসব শর্ত পূরণ করলেই তবে ঋণের তৃতীয় কিস্তির ঋণ অর্থ ছাড় পাবে বাংলাদেশ। এসব শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্যাক্স টু জিডিপি অনুপাত বাড়ানো। বিশ্বব্যাংকের স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ট্যাক্স টু জিডিপি অনুপাত ১৬-১৭ শতাংশ হওয়া জরুরি। তবে বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা সিইআইসির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এই অনুপাত মাত্র ৭.৯ শতাংশ, যেখানে শ্রীলংকার অনুপান ১০.৬। অর্র্থ্যাৎ সরকারকে আভ্যন্তরীণ রাজস্বের দিকে কঠোর নজর দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে সিগারেটের দাম বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন ধূমপায়ীর সংখ্যা কমানো যাবে, তেমনি এই দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের রাজস্ব খাতেরও প্রবৃদ্ধি হবে, যা প্রকারান্তরে দেশকে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা মনে করেন, দাম বাড়লে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমে আসবে। কারণ নি¤œস্তরের সিগারেটের ৮০ শতাংশ ভোক্তাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধূমপায়ীর সংখ্যাও কমে আসবে। ফলে অর্থনীতির মন্দার ভেতরেও রাজস্ব প্রবাহ বাড়বে।