খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছিলেন, আর বেশি সময় পাওয়া যাবে না
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল বুধবার রাতে প্রচণ্ড অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এখনো বন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। গতকাল বুধবার রাতে তিনি এত অসুস্থ হয়েছিলেন যে, চিকিৎসকরা সবাই বলছিলেন আর বোধহয় বেশি সময় পাওয়া যাবে না। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া যে, তাকে তারা আপাতত চিকিৎসা দিয়ে সেই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।
গতকাল দুপুরে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেন। রাতে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এর আগে বিকেলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) দ্রুত চিঠি দেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। পরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা বদলায় মেডিকেল বোর্ড।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
এদিকে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আজ দুপুরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা আগের মতোই আছে। বাসায় মেডিকেল বোর্ডের ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন আছেন। সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
গত ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ভর্তি হয়ে এক দিন পরই বাসায় ফেরেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গত বছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সরকার তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে, খালেদা জিয়ার সাজার স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তার বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন না।