দেশে উপেক্ষিত বিদেশে প্রশংসিত

আহমেদ তেপান্তর
২১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
দেশে উপেক্ষিত বিদেশে প্রশংসিত

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন বুলগেরিয়ার ঞযব এড়ষফবহ ঋবসর ঋরষস ঋবংঃরাধষ-এ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মনোনীত হয়েছে ‘কাঠগোলাপ’। উৎসব অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ১ জুন দেশটির রাজধানীর সোফিয়া বলকান প্যালেসে। ইতোমধ্যে ‘কাঠগোলাপ’ প্রযোজক পেয়েছে আমন্ত্রণপত্র। উৎসব কমিটি চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করে অফিসিয়ালি বিশেষ অতিথি হিসেবে উৎসবে যোগ দিতে অনুরোধও করেছে, যদিও গত ছয় মাসে মেলেনি সিনেমাটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন। উৎসব কমিটির ওয়েবসাইটে বুলগেরিয়া থেকে আসা এমন একটি পত্র ভাসছে। এর সত্যতা স্বীকার করেছেন প্রযোজক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরমান আলী। তিনি বলেন, এ মাসেই বুলগেরিয়ার উৎসবে যোগ দিতে আমন্ত্রণপত্র আসে। সিনেমাটি প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। এটি উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখানো হবে। তিনি আরও বলেন, যদিও আমার সিনেমাটি সেন্সর বোর্ড কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করেই ছয় মাস ধরে আটকে রেখেছে। যে কারণে ভালো সংবাদেও মনটা ভালো নেই।

জানা গেছে, সম্প্রতি সিনেমাটি আমেরিকার চান্স উৎসবে দেখানো হয় এবং সে দেশেও প্রশংসিত হয়। এর আগে সিত্তানভাসাল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা এশিয়ান ফিচার ফিল্মের পুরস্কার, নিতিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ডেব্যু ফিল্ম, মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত নেভি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা নারী চলচ্চিত্রের মর্যাদা, আথভাকরুনি পুরস্কার, থিলস্রি আন্তর্জাতিক উৎসবে সেরা নারী ফিচার ফিল্মের মর্যাদা, আমেরিকার এশিয়ান টাইগারস, রোহিপ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্য ছাড়াও কাঠগোলাপ (ঞযব ঝপবহঃষবংং) সিনেমাটি জাফনা গ্লোবাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা প্রযোজকের মর্যাদা লাভ করে।

বিদেশের মাটিতে একের পর এক প্রশংসা কুড়ালেও নিজ দেশের সেন্সর বোর্ডে উপেক্ষিত ‘কাঠগোলাপ’।

প্রযোজক বিষয়টি নিয়ে হতাশ। সিনেমাটিতে অনেক মানুষের জীবনের গল্পই বলা হয়েছে। কাঠগোলাপ যেমন প্রচুর সুবাস দেয়, আমাদের এ মানুষগুলোও সবার অনেক কাজে লাগে। এসবের বাইরেও মানুষের মনে একধরনের স্থবিরতা কাজ করে। আর এ থেকেই তৈরি হয় সংকট। সম্পর্কের এমন অনেক স্তর সমাজের চারপাশজুড়ে দেখা যায়। ‘কাঠগোলাপ’ নির্মাণ করেছেন সাজ্জাদ খান। অথচ এমন গল্প এখনকার অনেকের কাছে নতুন বলা হলেও গল্পের এমন আধুনিক দৃষ্টিকোণের সিনেমা নতুন নয়। ১৯৬১ সালে জহির রায়হান তার প্রথম সিনেমায় আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মাণ করেছিলেন ‘কখনো আসেনি’। সিনেমাটিতে অন্যান্য গল্পের সঙ্গে সমকামিতার গল্পও উপস্থাপন করা হয়েছে। বরেণ্য চলচ্চিত্র সমালোচক মাহমুদা চৌধুরী জহির রায়হানের ওপর রচিত গ্রন্থে এমনটাই ধারণা দিয়েছেন। ১৯৮৪ সালে মোরশেদুল ইসলামের ‘আগামী’ সিনেমাটিও কয়েকটি শব্দে আপত্তি দাঁড় করিয়ে সেন্সর বোর্ডে সমালোচিত হয়। সচেতন মানুষের জোর দাবির মুখে পরে তা সেন্সর ছাড়পত্র পায়। একইভাবে বলা যায় হুমায়ূন আহমেদের সর্বশেষ সিনেমা ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র গল্পটি চিরচেনা আমাদের সমাজের। এখানেও রয়েছে সমকামিতা, যৌনতা। এ সিনেমা সেন্সর বোর্ডে প্রশংসিত হয়। এর আগে অনেক অশ্লীল ছবি মুক্তির রেকর্ডও আছে।

চমৎকার বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ‘কাঠগোলাপ’। অথচ সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে ছয় মাস ধরে। এর কোনো লিখিত ব্যাখ্যাও দেয়নি সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, গল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতার মিল আছে কিনা তা জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ^বিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে!

সেন্সর বোর্ডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগম বলেন, যেহেতু এর আগে সিনেমাটি দেখার জন্য বিএসএমএমইউকে রেফার করা হয়েছে তাই বাধ্য হয়েই আমাকে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যদিও আমি তাদের বলেছি তারা চাইলে বন্ধের দিনেও সিনেমাটি দেখাতে সময় দেব। এখন অপেক্ষা তাদের জন্যই। বিএসএমএমইউ থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে আনতে পারলে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব। এতে সিনেমার মেরিট নষ্ট হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেখুন আমাদের একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার পরও আমার পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা থাকবে।

বিষয়টি নিয়ে প্রযোজক ফরমান আলী বলেন, এখন পর্যন্ত আমার সিনেমা নিয়ে তাদের কোথায় কী আপত্তি তা লিখিতভাবে তারা জানাননি। যে কারণে আমি আইনগত পদক্ষেপও নিতে পারছি না। অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবে আর কয়েকদিন দেখব এর পর আইনি পথেই যাওয়ার কথা ভাবছি, যদিও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মৌখিকভাবে আমাকে আস্থার কথাই জানিয়েছেন। তাই কিছুদিন অপেক্ষা করব। অন্যথায় আমাকে সিনেমা প্রযোজনা বন্ধ করে দিতে হবে। সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছে গত ১১ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর সিনেমাটি বোর্ডের সামনে প্রদর্শন করা হয়। সেন্সর বোর্ডের সিনেমাসংশ্লিষ্ট সদস্যরা নতুন এই গল্পটিকে সাধুবাদ জানান এবং আনকাট সেন্সর দিতে সুপারিশ করেন। সিনেমাসংশ্লিষ্ট অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশের সিনেমা রাতারাতি আনকাট সেন্সর পেলেও দেশি সিনেমার বেলায় কেন এত অজুহাত? সাজ্জাদ খান পরিচালিত ‘কাঠগোলাপ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন সাবরিনা

সুলতানা কেয়া, রাশেদ মামুন অপু, জামশেদ শামীম, মেঘলা মুক্তা, সুজন হাবিব, দিলরুবা দোয়েল, একে আজাদ সেতু, কুন্তল বিশ্বাস প্রমুখ।