প্রধান শিক্ষকের ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:২৯
শেয়ার :
প্রধান শিক্ষকের ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই সিরাজগঞ্জর উল্লাপাড়ায় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আইনুল হকের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গয়হাট্রা সালেহা ইসাহাক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘুষ নেওয়ার সময় গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা নিয়ে তোলপাড় তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। 

এ ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক শহিদুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটি। আর বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মো. শামসুল হক।

তবে গণমাধ্যমের কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিক্ষক শহিদুল। উল্টো ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও মারধরের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটি টাকা দেওয়ার নাটক সাজিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

অপরদিকে ম্যানেজিং কমিটি বলছে, টাকা নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শহিদুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠানো হয়। তার জবাব দেননি তিনি। পরবর্তীকালে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়ে। 

জানা গেছে, গয়হাট্রা সালেহা ইসাহাক উচ্চ বিদ্যালয়টি জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নে অবস্থিত। চলতি বছর বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী ও নৈশপ্রহরীর শুন্য পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায়। কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আইনুল হকে কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা অগ্রীম নেন প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অবিভাবক ও এলাকাবাসী। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষক শহিদুল প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম ভর করেছে বিদ্যালয়টিতে। 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি প্রধান শিক্ষককের কক্ষে বসে তার হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। এক পর্যায়ে আরও এক লাখ টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা তার হাতে দিলে তিনি সেটা গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকার ভুয়া বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করে নেন। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলে ম্যানেজিং কমিটি এখন আমার বিরুদ্ধে টাকা দেওয়ার নাটক সাজিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলামিন সরকার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পুকুর লিজ দেওয়ার ১১ লাখ টাকার হিসাব চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক শহিদুল কয়েক দিন বিদ্যালয়ে না এসে উল্টো ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী ও নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালেও জবাব না দেওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।’  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মো. শামসুল হক জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখা হবে। দ্রুত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।