জিম্মি উদ্ধারে পূর্বঅভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় সরকার
জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিক জিম্মি হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। অতীতে এমভি জাহানমণিসহ বিদেশি একাধিক জাহাজের ক্রু ও নাবিকদের দর কষাকষি করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অতীতের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সোমালিয়ায় জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি আবদুুল্লাহ ও এর ক্রুদের ফিরিয়ে আনতে চায় সরকার। তবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সোমালিয়ার জলদস্যুরা কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি। এদিকে জিম্মি জাহাজটির ওপর ভারতীয় একটি যুদ্ধজাহাজ নজর রাখছে বলে জানিয়েছে দেশটির নৌবাহিনী।
ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাইয়ের পর গত বৃহস্পতিবার এমভি আবদুুল্লাহকে সোমালিয়ার হোবায়ো বন্দরে পৌঁছে নোঙর করেছিল জলদস্যুরা। গতকাল শুক্রবার সকালে জাহাজটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জিম্মি জাহাজের চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খানের কাছ থেকে ইমেইল বার্তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক মেহেরুল করিম।
গতকাল শুক্রবার বিকালে মেহেরুল করিম বলেন, ?ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। দস্যুরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে না। এখনো পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের আর্থিক দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলেনি।
জানা গেছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত বৃহস্পতিবার সোমালিয়ার গারাকাত উপকূল
থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে নোঙর করেছিল। তবে জলদস্যুদের নির্দেশ অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকালে নোঙর তুলে জাহাজটি পুনরায় চলতে শুরু করে। ক্যাপ্টেনের ইমেইল বার্তার বরাতে মালিক মেহেরুল করিম জানান, জাহাজটি এখন আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জাহাজ নিয়ে তাদের পছন্দ মতো কোনো নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছানোর পরই হয়তো দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করতে পারে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে, সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে। এর আগে জলদস্যুদের সঙ্গে দর কষাকষি করে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মণিকে ক্রুসহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আরেকবার দস্যুদের হাতে আটক সাত নাবিককে ফেরত আনা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম বলেছেন, ‘২০১০ সালে জাহান মণিকে দস্যুরা এই রকম ভাবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় আমরা জাহাজটা ফেরত এনেছি। এরপর ২০১৪ সালের জুন মাসে জিম্মি হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজের সাত বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধার করা হয়। টাকার আশায় তারা আটকে রেখেছিল। ক্রুদের অক্ষত রেখে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শুক্রবার দস্যুদের কয়েকজন এমভি আবদুুল্লাহর পাইলট কেবিনে অবস্থান নিয়েছে। অন্যরা খোলা ডেকে অবস্থান নিয়েছে। নাবিকরা তাদের চাদর, বালিশ সরবরাহ করেছে। জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান আর একে-৪৭ রাইফেলসহ পাহারায় রয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা স্বাভাবিক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। জাহাজে সপ্তাহ দুয়েকের খাবার মজুদ আছে। আরও কয়েক জলদস্যু জাহাজে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
হর্ন অব আফ্রিকা ও পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় উপকূলে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা ঠেকাতে এক দশকের বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স (ইইউএনএভিএফওআর)। এমভি আবদুল্লাহকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলে জানা গেছে। এই কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন আটলান্টা’।
ইউরোপীয় নৌ নিরাপত্তা বাহিনী এক বিবৃতিতে এমভি আবদুল্লাহতে ১২ জলদস্যুকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অপারেশন আটলান্টার অংশ হিসেবে তারা সোমালীয় উপকূলে একটি জাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই জাহাজটি বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে। ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য সোমালিয়া ও বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় নৌবাহিনীসহ সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথাও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ভারতের নৌবাহিনী শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে জানিয়েছে, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল উড়োজাহাজ অবস্থান করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এয়ারক্র্যাফটটি জাহাজের ক্রুদের অবস্থা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তবে জাহাজ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং এর নাবিকদের মুক্ত করতে ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা’ চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে নাবিক এবং জাহাজ মুক্ত করা।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ বাংলাদেশের এস আর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেয়। ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।