রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান বাড়ানোর আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্র সচিব
ক্রমবর্ধমান তহবিল সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের প্রতিশ্রুত বিদ্যমান অনুদান আরও বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
আজ বৃহস্পতিবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২৪ জয়েন্ট রেসপন্স প্লান (জেআরপি)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নায্যতার ভিত্তিতে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায় ও দায়িত্ব গ্রহণ নীতি বাস্তবায়ন না করলে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর, আইওএম এবং ডব্লিউএফপি’র পক্ষে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য কার্যক্রম চালানো এবং সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব হবে না। ক্রমবর্ধমান তহবিল সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের প্রতিশ্রুত বিদ্যমান অনুদান আরও বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর গুরুতর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও দেশটি গত ছয় বছর ধরে ১.১ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। বাংলদেশ এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সর্ববৃহৎ দাতা দেশ এবং ২০২২ সালেই ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব মোমেন সতর্ক করে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ও সহিংস চরমপন্থার ঝুঁকি থেকে উদ্ভুত হুমকি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের চাপ কমাতে বিকল্প পথ অনুসন্ধানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রসচিব।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর ৩০ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে। জনাব মাসুদ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একীভূত করার সম্ভাবনা নাকচ করে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ সমস্ত মানবিক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন।’
এই বছর জেআরপি-তে ১৯৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১.৩৫ মিলিয়ন রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৮৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে JRP 2024-এর প্রথম কৌশলগত উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি উল্লেখ করেছেন যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনই হবে এই সংকটের টেকসই সমাধান। তিনি তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এছাড়াও, তিনি রোহিঙ্গা ও নিজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিতে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ক্রেডিট তহবিল হতে অনুদান ও ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
হাই কমিশনার আরও বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ জয়েন্ট রেসপন্স প্লানের সম্পূরক তহবিল স্ফীত করবে এবং তবে তা মানবিক সহায়তা প্রদানে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির প্রতিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।’
আইওএম মহাপরিচালক মিজ এমি পোপ, তার বক্তব্যে মানবিক সহায়তা তহবিলের ক্রমবর্ধমান তহবিল ঘাটতির বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে অনেক ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে তাদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এই জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে মুখ্যসচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়াও কক্সবাজারের বাস্তুসংস্থান ও জীব-বৈচিত্র্যের উপরে বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে উপস্থিত প্রতিনিধিগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তিনি বিশেষ করে উল্লেখ করেন যে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল কক্সবাজারেই ছয় হাজার হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমির অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোবিলায় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অধিকতর গুরুত্বারোপ করতে বলেন।
রোহিঙ্গাদের সহায়তা কার্যক্রমে ঋণ নয় বরং বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বব্যাংকের আইডা প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিংগা ও আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণ সহায়তা নেওয়ার বিষয়টি আলোকাত করেন। মুখ্যসচিব স্বাগতিক দেশের দুর্ভোগ প্রশমনে এই সংকট সমাধানে বোঝা ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে উদাত্ত আহ্বান জানান।
ইউএনএইচসিআর এবং আইওএম এর যৌথ আয়োজনে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২৪ জয়েন্ট রেসপন্স প্লানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া, ইইউ, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, জপান, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, তরস্ক এবং যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত সহ জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, এনজিও প্রতিনিধি, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মিডিয়া ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদারতার প্রশংসা করে অনেকেই এই জেআরপি তহবিলে অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বক্তারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হতে পারে বলে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেন এবং মিয়ানমার সরকারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান।