অধিগ্রহণের নামে নয়ছয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা
মাদারীপুর পাঁচখোলায় খানবাড়ী কমিউনিটি হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পে জমির মূল্য বেশি দেখিয়ে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা টিমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রকল্পটির জন্য নির্বাচিত জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন দলিল নেই।
ডিপিপি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকার মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ বা ৩৩ কোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, এবং বাকি ৮ কোটি ২৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বেসরকারি সংস্থা ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের। ওই টাকা প্রকল্প পরিচালক ও সংস্থার যৌথ ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার কথা ছিল। তবে এই শর্ত পরিপালন করা হয়নি বলে জানিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটির জন্য ৬২৭ শতাংশের ভূমির মূল্য বাবদ ৫ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দেখিয়েছে ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। কিন্তু ওই জমি সরকার ও সংস্থাটির যৌথ নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন হয়নি। অন্যদিকে জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশের মূল্য ৮০ হাজার ৭৬২ টাকায় ৬২৭ দেখানো হলেও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের প্রদত্ত রেট অনুযায়ী প্রতি শতাংশের গড় দর পাওয়া যায় ৩৪ হাজার ৫৩১ টাকা। অর্থাৎ সংস্থাটি প্রতি শতাংশের জন্য ৪৬ হাজার ২৩১ টাকা অতিরিক্ত দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সংস্থাটির নামে জমি থাকার দাবি করা হলেও এ সংক্রান্ত নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি বলে জানিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন। গত বছরের ১২ নভেম্বর সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা টিম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। এ সময় হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতরে ৭৭৩ বর্গফুট বা ৮৭ শতাংশ জমি পাওয়া যায়। তা ছাড়া প্রকল্প এলাকা মৌজা উত্তর পাঁচখোলার বিআরএস খতিয়ান ও দাগগুলোতে জমির মালিকানায় ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন নাম পাওয়া যায়নি।
পরিকল্পনা বিভাগে ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য সংগ্রহকৃত নতুন জমির ক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু খানবাড়ী কমিউনিটি হাসপাতাল স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারের ওই নির্দেশনা পরিপালন করা হয়নি। একদিকে প্রকল্পের জমি রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন না করা, অন্যদিকে ৫৪০ শতাংশ অধিক জমি ও বেশি মূল্য দেখিয়ে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে নিরীক্ষা টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জোবায়দা বেগম আমাদের সময়কে বলেন, জমির মূল অংশ রেজিস্ট্রেশন করা আছে, কিন্তু আশপাশের যে বড় এরিয়া যেখানে বিল্ডিং নেই ওয়াল দেওয়া আছে, ওইসব জমি এখনো রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। তবে ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন থেকে ওই জমি দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।