আমন্ত্রণপত্রে নাম না থাকায় শিক্ষককে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেতা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
১২ মার্চ ২০২৪, ১৭:২৭
শেয়ার :
আমন্ত্রণপত্রে নাম না থাকায় শিক্ষককে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেতা

আমন্ত্রণপত্রে এক আওয়ামী লীগ নেতার নাম না থাকায় গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন ওই নেতা ও তার অনুসারীরা। এ ছাড়া তারা বিদ্যালয়টির এক সহকারী শিক্ষককেও মারধরও করেন। 

গত বৃহস্পতিবার শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের ৮৯ নম্বর কেওয়া পশ্চিম খণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে। এর জেরে গত রবিবারের পূর্বনির্ধারিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন। মারধরের শিকার হলেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রুহুল আমিন।

অভিযুক্ত মো. আরিফুল ইসলাম সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের দাওয়াত পত্রে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আরিফুলের নাম ছিল না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার সোয়া একটার দিকে তিনি দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। তখন প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এরপর স্কুলের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে শাসিয়ে যান। এসময় সহকারী শিক্ষক মো. রুহুল আমিনকে পেয়ে আরিফুলের লোকজন তাকে মারধর করে। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, এ বছর আমাদের খেলা হবে না। আমরা পুরস্কার পাব না। আমাদের অনেক আশা ছিল প্রতিযোগিতা করব। আমাদের খেলা বন্ধ হয়ে গেছে। স্যারকে মারধর করা হয়েছে। আমরা বিচার চাই।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘অনুষ্ঠানের অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। ওইদিন আমি পুরস্কার কিনতে গিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতারা বিদ্যালয়ে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে শাসিয়ে গেছে। সহকারী শিক্ষক রুহুল আমীনকে মারধর করেছে। তাদের বাধার কারণে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আরিফুল ইসলাম সরকারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দাওয়াত কার্ডে নাম না থাকা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে অনুষ্ঠান বন্ধের হুমকি দিয়ে গেছে আরিফ সরকার ও তার লোকজন। শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। তাদের বাধার কারণে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্যই শিক্ষককে মারধরের বিচার হওয়া উচিত।’

উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, ‘শিক্ষকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষককে মারধর একটি অপরাধ। প্রধান শিক্ষককে বলেছি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে।’ 

প্রসঙ্গত, ওই বিদ্যালয়ের বার্ষিকী ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয় শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমানকে। এছাড়া অতিথি করা হয় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান মুকুল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভুইয়া, শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমজাদ হোসেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পারুল খানমকে।