কোন্দল নিরসনে ফের ডাক পাচ্ছে তৃণমূল

মুহম্মদ আকবর
০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
কোন্দল নিরসনে ফের ডাক পাচ্ছে তৃণমূল

সাধারণত রমজান মাসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি থাকে না। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিগত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে তা মিটমাট হওয়ার আগেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। ফলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার সঙ্গে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর স্থলে নতুন কমিটি গঠনের মতো কাজ রমজানেও করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। সে সঙ্গে রমজানে দরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় প্রধানের নির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য আওয়ামী লীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মাসব্যাপী সেবামূলক কর্মসূচি থাকবে বলে দল থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে এলাকাভেদে সিরিজ বৈঠক করবেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের আওয়ামী লীগ নেতা ও দলের এমপি এবং দলের অনুমতি নিয়ে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপিদের ডেকে দুই দফা বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে সবাইকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অনিবার্যতার কথা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন। তারপরও এই দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ কমতে দেখা যায়নি। জাতীয় দিবসগুলোতে কোথাও কোথাও নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করতে দেখা গেছে। ঘটছে সংঘাতও। এরই মধ্যে তৃণমূল থেকে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা হচ্ছে কেন্দ্রে। তাই কেন্দ্র থেকে অভিযোগের মাত্রা বুঝে এবং এলাকা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য শিগগির কাজে নামছেন বলে জানান তারা।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল মনে করছে, দীর্ঘ সময়জুড়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলের প্রায় সবখানেই দলে কোন্দল রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রাজনীতি করছেন। দলে এমন অবস্থা থাকলে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনসহ সামনের দিনগুলোতে ‘ভিন্ন মহল’ সুবিধা নিতে পারে বলেও ধারণা আওয়ামী লীগের। ফলে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিকল্প ভাবছে না দলটি। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রে ডাকা হচ্ছে তৃণমূল অওয়ামী লীগকে। দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, বিভাগ অনুযায়ী পর্যায় ক্রমে তাদের ডাকা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশে ফিরলেই এ কার্যক্রম শুরু হবে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এবং ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পর্যায়ক্রমে এই সব বৈঠক হবে।

এ প্রসঙ্গে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের যেসব সাংগঠনিক কাঠামো অসম্পূর্ণ আছে, সেখানে কাজ করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের ভেতর অসন্তোষ ও টানাপোড়েন আছে। এক ধরনের বিভক্তি আছে। এগুলোকে সমন্বয় করার পাশাপাশি ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটানো আমাদের কাজ। সে সঙ্গে দেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের দল থেকে যে ইশতেহার দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকার থেকে যেমন উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে সেভাবে দল থেকেও আমরা ধাপে ধাপে কাজ করে যাবো।’

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অধিকতর উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দলের যে কোনো সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। সুতরাং দলীয়ভাবে এ বিষয়ে তেমন কাজ করার সুযোগ এখন নেই। পবিত্র রমজান মাসে আমাদের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা ইফতার মাহফিল ও গণসংযোগ নিয়ে সময় অতিবাহিত করবেন। দলের যারা যে আঙ্গিকেই ইফতার মাহফিল ও গণসংযোগ করবেন, সেটি তার যেমন কাজে আসবে, দলেরও কাজে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘কোন্দল সমাজে যেমন অপরিহার্য অনুষঙ্গ, বাঙালির আপন দল আওয়ামী লীগেও কিছু কোন্দল থাকবেই। আমরা সর্বদা এটি প্রশমিত করতে সচেষ্ট থাকি।’

রংপুর বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের সাংগঠনিক কাজ করা আমাদের নিয়মিত দায়িত্ব- এটা চলছে, চলবে। রমজানেও চলবে। এর আগে-পরেও চলবে। আর রমজানে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা সেটা করব।’ তৃণমূল নেতাদের ডাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরই আগে গণভবনে নেত্রী দুই দফায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এখন সেখানে হবে না। বিভাগ অনুযায়ী ডেকে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলবেন, নির্দেশনা দেবেন।’ তিনি জানান, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিয়মিত চেকআপ শেষে শনিবার দেশে আসবেন। তিনি এলেই সাংগঠিনক কাজ শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন, পৌর ও সিটি নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে করণীয় বিষয় সমন্বয় করার পাশাপাশি দলীয় কোন্দল নিরসনে রমজানে ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল নেতাদের ডাকা হবে। যেসব এলাকায় জটিলতা আছে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।