দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে
হাজারো বাধা-নিষেধের দেয়াল ভেঙে, অপমান ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে অদম্য শক্তিতে নারীরা বেরিয়ে এসেছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তকমা ছুড়ে ফেলে অনেক ক্ষেত্রে নারী নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে মূলধারায়। তেমনি একজন সেহেলী সাবরীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। ২০২৩ সাল থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
তবে সেহেলী সাবরীনের প্রথমে ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এমবিএ শেষ করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করার। পরিবারে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা বেশি থাকায় বয়োজ্যেষ্ঠরা সবসময় বিসিএস পরীক্ষা দিতে তাকে উৎসাহ দিতেন। পছন্দের পাত্রকে জীবনসঙ্গী করবার জন্য সেহেলী সাবরীনের বাবার একমাত্র শর্ত ছিল বিসিএস দিতে হবে। আর এভাবেই সেহেলী সাবরীনের বিসিএস ক্যাডার হয়ে ওঠা।
পররাষ্ট্র ক্যাডারে কাজ করার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কূটনীতিকরা ঠিক কী কাজ করে থাকেন সে সম্পর্কে সেহেলী সাবরীনের খুব কম ধারণা ছিল। সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতার কারণে মন্ত্রণালয়ের কঠিন কাজগুলো সিনিয়রদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শিখে নিতে তেমন সমস্যা হয়নি তার। সেহেলী সাবরীন মনে করেন টিম স্পিরিট এবং শেখার আগ্রহ থাকলে যে কোনো কঠিন ও জটিল কাজ সহজ করা যায়। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নারী-পুরুষ বিবেচনা না করে একজন কূটনীতিককে যে কোনো দায়িত্ব দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
চাকরি জীবনে সেহেলী সাবরীনের ভালো-খারাপ দুই ধরনের অভিজ্ঞতাই আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাটা সুখকর। তিনি সহকর্মীর সহযোগিতা পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন। আবার অনেক সময় কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হয়েছে যে, একজন নারী হয়েও তিনি কাজটি করতে পারেন। এই দুই ধরনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন কূটনীতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে তিনি শিখছেন।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেহেলী সাবরীন মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালকের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব স্যারের উৎসাহ, উপদেশ, সহযোগিতা এবং আস্থার কারণে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক কাজের ইনপুট সংগ্রহ করে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি ব্রিফ করি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নারী কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিহার্য বলে মনে করেন সেহেলী সাবরীন। তিনি বলেন, আমাদেরকে দিনে-রাতে যে কোনো সময় মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রোটকলের কাজে এয়ারপোর্টসহ দেশের বাইরেও থাকতে হয়। এ ছাড়াও কর্মসূত্রে বিদেশে পোস্টিংয়ের জন্য দেশের বাইরে দীর্ঘসময় থাকতে হয়। এ সময় পরিবারের সাপোর্ট খুব জরুরি। একজন নারীকে তার পরিবারের সহযোগিতা পেশাগত ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চাকরির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সেহেলী সাবরীন বলেন, ২০১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করবার সময় সেখানকার আচেহ প্রদেশে নৌকায় করে প্রায় সাতশর মতো অনিয়মিত বাংলাদেশি পৌঁছে। দূতাবাস থেকে তাদের জাতীয়তা শনাক্ত করার জন্য আচেহ প্রদেশের দুর্গম উপকূলে গিয়ে দিন-রাত সবার তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জাতীয়তা নিশ্চিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। স্বাগতিক দেশে নিজ দূতাবাসে কর্মরত থাকাকালে দেশের এমন একটি ঘটনা আমাদের জন্য ছিল বিব্রতকর।
তিনি বলেন, আবার ইন্দোনেশিয়াতে কাজ করার সময় সেদেশে দুবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিভিআইপি সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। সফরের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো আমরা দূতাবাসের কর্মকর্তারা ফটো তোলার সুযোগ পাই। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলাটা ছিল একটি আনন্দময় স্মৃতি।