কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে: শিক্ষামন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
০৫ মার্চ ২০২৪, ১৯:১৩
শেয়ার :
কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে: শিক্ষামন্ত্রী

কওমি মাদ্রাসা বন্ধে কোনো বক্তব্য দেননি বলে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‌কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ সম্পর্কিত কার্য অধিবেশন শেষে কওমি মাদ্রাসা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই বক্তব্য কয়েকটি গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি।  

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের থেকে একটি জেলা থেকে একটি আলোচনা এসেছিল যে অনিবন্ধিত নাম-পরিচয়হীন কিছু প্রতিষ্ঠান নূরানী মাদ্রাসা হিসেবে গড়ে উঠছে। সেগুলো নিবন্ধনের প্রক্রিয়া কী? সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি মন্তব্য করেছিলাম যে, যেসব নূরানী মাদ্রাসা গড়ে উঠছে সেগুলো যদি কওমি মাদ্রাসার বোর্ড থেকে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে তাদের সঙ্গে কাজ করে, যথাযথ নিবন্ধন তাদের কাছে আছে কি না, সেগুলোতে কীভাবে শিক্ষাক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সেটা কীভাবে আমাদের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় সে ধরনের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে সেটা ইউনিফরমিটির মধ্যে আনা যায়।’

মাদ্রাসা সংক্রান্ত নিজের দেওয়া বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে দাবি করে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘সোমবার একটি রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক নামধারী কিছু সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, আমি বলেছি যে নূরানী বা কওমি মাদ্রাসার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমি পরিষ্কার করে বলছি যে এ আলোচনা এসেছে জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে যে অনিবন্ধিত অনেক প্রতিষ্ঠান চলছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রক কারা?’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য (কওমি মাদ্রাসা বন্ধ) আমি করিনি। যারা এ আলোচনা সৃষ্টি করে একটা গুজব রটাচ্ছে, অপপ্রচার। আমার বক্তব্য ভিডিওসহ আছে। গুজব রটিয়ে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তারা এ অপরাজনীতি প্রাক্কালে আরও অনেক ধরনের মানহানিকর এবং আপত্তিকর কথা বলছে। এরমধ্যে একটি ছিল যে আমি ইসকন নামের একটি সংগঠনের সদস্য এবং ইসকনের সদস্য হয়ে আমি ভিন্ন সংস্কৃতি শিক্ষাক্রমে ঢোকানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত আছি। আমার বক্তব্য হচ্ছে এটা একেবারে আপত্তিকর, মানহানিকর এবং ষড়যন্ত্রমূলক। আমি ইসকনের সদস্য বলে প্রচার করছে। আমি ইসকনের সদস্য না।’

তিনি বলেন, ‘আমি একজন অসাম্প্রদায়িদক মানুষ হিসেবে আমার বাবা বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের তীর্থ কেন্দ্রে, পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইসকনের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে এ নয় যে আমি ইসকনের সদস্য। ইসকনের সদস্য হিসেবে আমাকে প্রচার করা হচ্ছে, আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি যে কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে আছে, অবশ্যই থাকবে। কারণ আমরা আইন দ্বারা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স স্বীকৃতি দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সেখানকার শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ন্যূনতম লিটারিসির কথা বলছি, তারা যাতে কর্মসংস্থান পায় সেসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একসঙ্গ কাজ করতে চাচ্ছি, আগামীতেও কাজ করব। তাদের বারবার আমন্ত্রণও জানিয়েছি। এখানে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো কথা কেউ কখনো বলেনি।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটি পরিকল্পনার মধ্যে থেকে, নিবন্ধনের মধ্য থেকে, কী পড়ানো হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপরে নজর রেখে, আমাদের এ প্রজন্মকে কী পড়াচ্ছি সেটা জাতীয় শিক্ষাক্রম হোক, কওমি মাদ্রাসা হোক বা ইংরেজি মাধ্যমে হোক সেটার ওপর রাষ্ট্রের নজর তো অবশ্যই থাকতে হবে।’