ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে নতুন উদ্যোগ
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকা-ের পর নড়চেড়ে বসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এবার রাজধানীর সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে একটি নীতিমালা তৈরি এবং এতে বুয়েটসহ বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে তৃতীয় পক্ষ যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজউক ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নগর উন্নয়ন কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হতে পারে।
জাতীয় নগর উন্নয়ন কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ভবনের ত্রুটি বা ঝুঁকি চিহ্নিত করতে তৃতীয় পক্ষ নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। আগামী দশ কর্মদিবসের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যত ভবন আছে, সব পরীক্ষা করা হবে। কোনো ভবন ভেঙে ফেলা হবে কিনা সেটি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আলোকে অবৈধ ভবন বৈধকরণ পদ্ধতিও চূড়ান্ত করা হবে। কমিটি প্রস্তাব করেছে, নির্ধারিত ফির ৫ গুণ জরিমানা দিয়ে অবৈধ ভবন বৈধকরণ করা হবে। তবে এটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় চূড়ান্ত হবে।
ঝুঁকি যাচাই-বাছাই কমিটিতে রাখা হবে সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞদের। সেখানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) প্রতিনিধি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) প্রতিনিধি, রাজউকের টেকনিক্যাল প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে হবে তৃতীয় পক্ষ।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা আমাদের সময়কে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্ণয়ের কাজ রাজউক আগে থেকে করে আসছে। এবার টেকনিক্যাল লোক দিয়ে কাজটি করা হবে। তাই জাতীয় নগর উন্নয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ হয়ে গেলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করে যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করবে, সেগুলো আমরা সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক বা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব। তা ছাড়া নতুন নির্মিত ভবনে অকুপেন্সি সনদ ছাড়া সেবা সংস্থার সংযোগ না দিতে সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে।
জাতীয় নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য স্থপতি ইকবাল হাবিব আমাদের সময়কে বলেন, নীতিমালা হলে ঢাকা শহরের অবৈধ ভবনগুলো একটা কাঠামোতে চলে আসবে। অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে রাজউকের অভিযানের জন্য একটা গাইড লাইন তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অভিযানে যাওয়ার পর ভবনটি কীসের ভিত্তিতে অবৈধ বা ঝুঁকিপূর্ণ, অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যত্যয় চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো লিখিত থাকতে হবে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাজউকের আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের আওতায় ৪২টি ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৌচাক মার্কেট ছিল। সেই মার্কেটে হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের স্থিতিতাবস্থা দেওয়া হয়। হাইকোর্টের সেই নির্দেশনায় রয়েছে জনসাধারণ নিজ নিজ বিবেচনায় সাবধানতা অবলম্বন করে ভবনে প্রবেশ করবে। হাইকোর্টের এ নির্দেশনাটি যেন মার্কেটের সামনে টাঙিয়ে দেওয়া হয় সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ মুহূর্তে রাজধানীর কতগুলো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তার সঠিক তালিকা রাজউকের কাছে নেই।
ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৭৬ বহুতল, শিল্পকারখানা, মার্কেট-শপিংমল, সরকারি ও অন্যান্য ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অতি অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনের সংখ্যা পাওয়া গেছে ৪২৪টি, আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৪টি।