‘আমি বরই দিয়ে ইফতার করব, আর তুই খেজুর খাবি’
আঙুর-খেজুরের পরিবর্তে বর-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দেওয়ায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় করার আহ্বান জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় যুবজোটের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করে এ কথা বলেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি একটু আগে মোবাইলে দেখলাম, এক মন্ত্রী বলেছেন, “রোজার সময় খেজুর আর আঙুর দিয়ে ইফতার কইরেন না, বরই দিয়ে করেন।” আল্লাহ, কী বলব বলেন! নিত্যপণ্যের মূল্যে মানুষ জর্জরিত। আপনি (মন্ত্রী) মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা-মস্করা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের মন্ত্রীকে এখনই লাথি মেরে বের করে দেন। কত বড় সাহস। বরইয়ের বস্তা ওই মন্ত্রীর বাসায় ফেল। আমি বরই দিয়ে ইফতারি করব, আর তুই খেজুর আর আঙুর খাবি। সাহস থাকে তো বল। খেজুর আর আঙুরের আমদানি নিষিদ্ধ কর। কর নিষিদ্ধ। খেজুর আর আঙুর আমদানি করবা, গরিব মানুষ বরই খাবে, তুমি আঙুর আর খেজুর খাবা, তা হবে না, হা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র দুমাস হলো নির্বাচন শেষ হলো। একটা উত্তাপহীন রাজনীতির কথা ছিল। কিন্তু একটা গুমোট ভাব। কোনো উত্তেজনা নেই। বিরোধিতার মতো রাজনৈতিক যুদ্ধের ভেতরে নির্বাচন কখনো ভালো হয় না। তাই হয়েছে। কমতি আছে, ঘাটতি আছে। কিন্তু দিন শেষে দেশে এত বিরোধিতার মুখেও নির্বাচনের রাজনীতির অনিশ্চয়তা দূর করে নির্বাচনটা হয়েছে। একটা স্বস্তি এসেছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ, দিন আনে দিন খায়, নিম্ন বিত্ত মানুষের জীবনে কোনো স্বস্তি আসেনি। তারা পেটের জ্বালায় জর্জরিত। তেল, নুন পেয়াজ চিনি, আদা রসুন, মরিচ, যেটাতেই হাত দেয় হাতে পুড়ে যাচ্ছে। সকালে একদাম, বিকেলে ডাবল দাম।’
ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হুঙ্কার ছাড়ছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীরা চিৎকার করছেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, কিন্তু দাম কমছে না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাহলে ব্যর্থ কে? শাসন ব্যর্থ। কেন তারা কথা শুনছে না? এটা কি সিস্টেমের দোষ, মুক্তবাজার অর্থনীতির দোষ, নাকি যারা দাম বাড়াচ্ছেন তারা সরকারের ছায়ায় বসবাস করেন যে তাদের গলা টিপে ধরা সম্ভব হচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও দাম কমে না, অস্বাভাবিক ব্যাপার! এত শক্তি, এত সাহস, এটা কীভাবে সম্ভব! এই জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করছে কয়েকবছর ধরে।’
এ সময় বাজার সিন্ডিকেট নিয়েও কথা বলেন হাসানুল হক ইনু। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার মন্ত্রীরা বললেন মূল্য নির্ধারণ কমিশন নাই। কেন নাই? পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। মূল্য নির্ধারণ কমিশন করেন। বছরের শুরুতে দাম বলে দেবে। তার একটা এদিক-ওদিক হলে ব্যবসাদারের পিঠের ছাল তুলে নেব। আপনি খুচরা বাজারে হানা দেন, পাইকারি বাজারে যান না। ব্যাপারটা কী? ওদের পেট মোটা এই জন্যে? আপনি জানেন না যে দাম ওঠানামা করে পাইকাররা? আপনি জানেন না নিত্যপণ্যের ৫০ ভাগ আমদানি করে ছয়টা কোম্পানি? নাম বললাম না। টিকে গ্রুপ, ওমুক গ্রুপ, মোহাম্মদীয় গ্রুপ, সালাম গ্রুপ, ৫০ ভাগ আমদানি করে। একটা টেলিফোন করে দাম সকালে-বিকালে এদিক ওদিক করে দেয়। একচেটিয়া চক্র ছয়টা কোম্পানি ভাঙতে কতক্ষণ লাগে? কত বড় ব্যবসাদার হয়েছে, তোরে বেধে রেখে বলব দাম কমা এখনই। সম্ভব না কেন? সবই সম্ভব।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় যুবজোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন। যুবজোটের রাজশাহী মহানগর সভাপতি শরিফুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাসদের সহসভাপতি মজিবুল হক বকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, মহানগরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাসদের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, রাজশাহী জেলা জাসদের সভাপতি প্রদীপ মৃধা, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির বাবু, যুবজোটের কার্যকরী সভাপতি আমিনুল আজিম বনিসহ আরও অনেকে।