পুলিশের মামলায় আসামির তালিকায় ‘আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ’ ও ‘কাচ্চি ভাই’
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মানুষ হতাহতের ঘটনায় ভবন মালিক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপসহ চারজনের নামে মামলা করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ছাড়াও কয়েকটি ধারায় মামলাটি করেন।
ভবনটির নিচতলায় থাকা ‘চুমুক ফাস্টফুড’-এর মালিক আনোয়ারুল হককে (২৯) প্রধান আসামি করে এই মামলা করা হয়েছে। মামলায় এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হলেন যথাক্রমে- গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিক প্রতিষ্ঠান ‘আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ’, ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল (৪০) এবং ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁর মালিক মো. সোহেল সিরাজ (৩৪)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয় মামলায়।
ভবনটির সব ফ্লোর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনমতি থাকলেও রেস্টুরেন্টের জন্য ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শক অফিসারদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে রেস্তোরাঁ স্থাপন করা হয়। গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করা হতো বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের পক্ষের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুলকে আজ দুপুরে ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় আজ রাত পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের (২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ জন শিশু) মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ‘কাচ্চি ভাই’-এর ম্যানেজার ও ‘চুমুক’-এর দুই মালিকসহ চারজনের প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেপ্তার হওয়া ‘কাচ্চি ভাই’-এর ম্যানেজার জিসান, ‘চুমুক’-এর মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুলকে শনিবার আদালতে হাজির করে পুলিশ।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনছার মিলটন তাদের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিক ও ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এবং দোকান ভাড়া দেন। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার এবং চুলা ব্যবহার করে আসছিল। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য ভবনের মালিক ও ম্যানেজারের যোগসাজশে ‘চুমুক’, ‘কাচ্চি ভাই’, ‘মেজবানী রেস্টুরেন্ট’, ‘খানাস ফ্ল্যাগশিপ’, ‘স্ট্রিট ওভেন’, ‘জেষ্টি’, ‘হাক্কা ঢাক্কা’, ‘শেখ হলি’, ‘ফয়সাল জুসবার (বার্গার)’, ‘ওয়াফেলবে’, ‘তাওয়াজ’, ‘পিৎজা–ইন’, ‘ফোকো’ এবং ‘এম্ব্রোশিয়া’ রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
মামলার এজাহারে বলা হয়, তারা জননিরাপত্তা তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধানতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং বিপজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিলেন। এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোঁয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্ট ও দোকানে অবস্থানকারী লোকজন আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়া শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান এবং গুরুতর আহত হন।
এতে বলা হয়, ভবনটি আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে মালিক ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ব্যবসায়িক কাজে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়। ভবনটির যেসব তলায় রেস্তোরাঁ ছিল, সেগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নেই।
এজাহারে বলা হয়, ভবনের মালিক, ম্যানেজার ও রেস্তোরাঁর মালিকরা ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম মানেননি। তারা আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ভাড়া দিয়েছেন। রাজউক দোকান পরিদর্শকদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ স্থাপন করে, গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জানান, বেইলি রোডে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতগুলো প্রাণহানির ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।