মৃত্যুর আগে ভিডিও কল দিয়েছিলেন মাকে, হয়নি কথা
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান নারায়নগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শান্ত হোসেন (২৩)। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বেইলি রোডের ওই ভবনের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন তিনি। মৃত্যুর আগে মাকে ভিডিও কল দিয়েছিলেন শান্ত। তবে অগ্নিকাণ্ডের কোনো কথা মাকে জানিয়েই ফোন রেখে দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে পুড়ে মারা যান শান্ত। তার বাবা থাকেন সৌদি আরব। বাবা বিদেশে কাজ করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় সংসারের দায়িত্ব তুলে নিতে রেস্টুরেন্টটিতে কাজ নিয়েছিলেন তিনি।
নিহত শান্তর মা লিপি আক্তার বলেন, ‘গতকাল শান্ত আমাকে ভিডিও কল করে। সে কখনো ভিডিও কল করে না। গতকাল হঠাৎ করে সে ভিডিও কল করে। কোনো সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চাইলে, সে কিছু না বলেই ফোন রেখে দেয়। পরে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি, সে যেখানে কাজ করে, সেখানে আগুন লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শান্তর বাবা বিদেশ থাকে। কিন্তু সেখানে তার আয় তেমন একটা ভালো না বিধায় আমার ছেলেটা সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিল। ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ছেলটাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেল। তার বাবাও শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার সুযোগ পেলো না।’ লিপি আক্তার ভাঙা ভাঙা গলায় কথায় গুলো বলছিলেন আর ডুকরে কাঁদছিলেন।
শান্তর ছোট ভাই প্রান্ত হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর মোবাইলে দেখি। তারপরে আমি ভাইকে ফোন দেই। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাই। ভাইয়ার সাথের এক কলিগকে ফোন দিলে তার ফোনটি পুলিশ ধরে। পুলিশ আমাদের বলে হাসপাতালে মরদেহ রয়েছে। আমরা সাথে সাথে ঢাকা মেডিকেল যাই। সেখানে গিয়ে কোথাও আমার ভাইকে খুঁজে না পেয়ে, পরে মর্গে যাই। সেখানে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই। সেখান থেকে সকালে লাশ নিয়ে বাড়িতে আসি।’
সকালে শান্তর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে স্বজনদের কান্না আহাজারিতে ভারি হয়ে আসে পরিবেশ।
শান্তর চাচা কামাল হোসেন বলেন, ‘বাবার আয়ে সংসার চলছিল না বলে পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিল শান্ত। বর্তমান সময়ের ছেলেদের মতো ছিল না সে। পরিবারের কথা চিন্তা করত। খুবই ভালো ছিল আমার ভাতিজা। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমার ভাতিজার সাথে তার স্বপ্নগুলো পুড়ে গেল।’
আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঈদগাহ মাঠে শান্তর জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।