সিলেটে ১০ ঘণ্টা পর পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত

সিলেট ব্যুরো
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:১৯
শেয়ার :
সিলেটে ১০ ঘণ্টা পর পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত

সিলেটে হযরত শাহজালাল (র) -এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে তিন দিন আগে আসেন জনৈক মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে নারী-পুরুষ-শিশুসহ এলাকার আরও প্রায় ৪০ জন। আজ বুধবার সকালে তাদের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সকালে সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনালে এসে জানতে পারেন, পরিবহণ শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে। সময়মতো যানবাহন না পেয়ে, সারাদিন টার্মিনালেই কাটাতে হয় তাদের।

এদিকে আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে পরিবহন ধর্মঘাট শুরু করেন সিলেট জেলা পরিবহণ ঐক্য পরিষদ। টানা ১০ ঘণ্টা পর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল ৪টায় ধর্মঘট স্থগিত করে সংগঠনটি। 

সিলেটের রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো, সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় আটক নেতাকর্মীদের জামিন, পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ ৫ দফা দাবিতে এ ধর্মঘট পালন করা হয়।

ধর্মঘাটে আটকে পড়ে ইউনূস বলেন, যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানে যাওয়া যায়। তা না করে সাধারণ মানুষকে এভাবে জিম্মি করা ঠিক হচ্ছে না।

ইউনুসের মতো শুধু সাধারণ যাত্রীরাই নন, এসএসসি পরীক্ষার দিন হওয়ায় যানবাহন সংকটের কারণে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে ব্যাপক বেগ পেতে হয় অভিভাবকদের। প্রতিযোগিতা করে রিকশা বা অটোরিকশা পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। পুলিশের ভ্যানে করেও অনেক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে।

সিলেটের ফিলিং স্টেশনগুলোতে যথেষ্ট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। তবে পরিবহণ নেতারা একই সঙ্গে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় আটক শ্রমিকনেতা ও কর্মীদেরও নিঃশর্ত জামিন দাবি করছেন।

পরিবহন নেতারা বলছেন, সিলেটে বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে গ্যাস পাচ্ছেন না পরিবহন শ্রমিকরা। গত কয়েক বছরে গ্যাসের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় মন্ত্রী ও এমপিদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও সমাধান মিলছে না। বাধ্য হয়েই তারা এবার কঠোর আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন। 

একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় মামলায় শ্রমিকদের জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন পরিবহণ নেতারা।

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পাচ্ছে না পরিবহন শ্রমিকরা। গ্যাস সংগ্রহ করতে গিয়ে ব্যায় হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘণ্টা।

পরিবহন শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিলেটের সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের সংকট দূর করা, রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় আটক শ্রমিকদের মুক্তি এবং ২০২১ সালের চৌহাট্টায় শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার করা।

জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময় গাড়ি পুড়ানো মামলায় শ্রমিকদের জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তবে সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বিষয়গুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আগমী ১১ মার্চের মধ্যে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ৫ দফার বিষয়ে বৈঠক করে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সমাধানে কাজ করবেন। এছাড়া মামলা বিষয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র।