সীমান্তের ওপারে নেই গোলাগুলি, স্বস্তিতে কাজে ফিরেছেন এলাকাবাসী
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপারে গোলাগুলি ও মর্টারের শব্দ থেমেছে। আজ বুধবার সারাদিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে টেকনাফের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শোনা যায়নি। সীমান্তের এপারের মানুষের কাছে দিনটি কেটেছে স্বস্তিতে। মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ বন্ধ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে নিজেদের কাজেকর্মে ফিরেছেন সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে গত ১১ দিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও মর্টারের শব্দ শোনা যায়নি। কিন্তু এর আগের তিন সপ্তাহ সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও গোলাগুলির বিকট শব্দে ভয়াবহ অবস্থায় কেটেছে তাদের। জীবনের নিরাপত্তায় এপারের দুই সীমান্তের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে।
এ ছাড়া ঘুমধুম জলপাইতলীতে মর্টারশেল পড়ে দুই জনের মৃত্যু এবং তুমব্রুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় সেখানকার কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের কর্মে ফিরেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্র এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘তুমব্রুতে আমার দশ খানি জমিতে ধানক্ষেত রয়েছে। গত দুই সপ্তাহ আগেও ক্ষেতে কাজ করতে গেলে শুধু গুলি পাওয়া যেত। এ ছাড়া গোলাগুলি ও মর্টারের বিকট শব্দে ভয়ে কাজ না করে বাড়ি ফিরতে হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, গোলাগুলিও নেই। গত কয়েকদিন ক্ষেতে ভালোমতো কাজ করতে পারছি।’
এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি বন্ধ থাকায় সেখানকার মানুষও স্বস্তিতে রয়েছেন। নাফনদের এ দুই সীমান্তে কয়েক হাজার একর জমিতে লবণ চাষ, চিংড়ি ঘের ও শীতকালীন সবজি ক্ষেত রয়েছে। রাখাইনে অস্থিরতার সময় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারা এখন ক্ষতি পোষাতে দিনরাত মাঠে কাজ করছেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার লবণ চাষি মোহাম্মদ সালাম বলেন, ‘মিয়ানমারে গোলাগুলির জন্য ৪০ একর লবণ চাষ ব্যাহত হয়েছে। শ্রমিকদের ঘরে বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হয়েছে। আপাতত সীমান্ত শান্ত থাকায় লবণ মাঠে দিনরাত কাজ করছি, যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।’
গত তিনদিন ধরে শাহপরীর দ্বীপ ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। গত রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি বিকট শব্দ ছিল। সীমান্ত পরিস্থিতিতে নাফনদে নৌযান চলাচল অনিরাপদ হয়ে পড়ায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছেন প্রশাসন। তবে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সীমান্ত নিরাপদ করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
শাহপরীর দ্বীপ এলাকার জেলে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহের শেষ দিকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি ও বোমা হামলা হয়েছিল। আমরা নিজ চোখে রাখাইনে বিমান ও হেলিকপ্টার দিয়ে হামলার দৃশ্য দেখেছি। বোমা বিস্ফোরণের ভয়াবহ শব্দে এপারে আমাদের ঘরবাড়িও কেঁপেছে। এখন গত তিন ধরে আপাতত সীমান্ত শান্ত। কোনো গোলাগুলি ও মর্টারশেলের শব্দ নেই। আমরা এখন নাফনদে নিরাপদে মাছ ধরতে পারব।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে গত তিনদিন তেমন গোলাগুলি শোনা যায়নি। অনেকটা স্বাভাবিকতা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত থাকলে পুনরায় নাফনদ হয়ে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলবে।’