অবশেষে ভারতে ফিরে গেল সেই দুই বন্য হাতি
বাংলাদেশে ঢুকে পড়া ভারতীয় দুই বন্য হাতি নিজ দেশে ফিরে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেইন পিলার ৭৩০ এলাকা দিয়ে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে হাতি দুটি ফিরে গেছে।
আজ বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেতুঁলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি।
ভারতীয় বন বিভাগের হাতি উদ্ধার বিশেষজ্ঞ দল, বিএসএফ, বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে আসা বন বিভাগের ৪ সদস্যর একটি বিশেষজ্ঞ দল, পঞ্চগড় বন বিভাগের সদস্যরা, তেতুঁলিয়া উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবির সমন্বিত সহযোগিতায় হাতি দুটির উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ইউএনও ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে হাতি দুটিকে ভারতে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ওই এলাকা বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমি ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের লোকজনের সাথে কথা বলেছি, বর্তমানে হাতি দুটি ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার ভেতরে একটি জঙ্গলের দিকে চলে গেছে। বর্তমানে আমরা শঙ্কামুক্ত রয়েছি। তবে একজন মানুষকে আমরা হারালাম। আমরা পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি এবং তাদের সার্বিক খোঁজ খবর রাখছি।’
পঞ্চগড় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নূরুন্নাহার বলেন, রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির, ফরেস্টার ইউসুফ আলী, গোলাম কবির, জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট সোহেল রানাসহ ৫ সদস্যর একটি দল এবং তেতুঁলিয়া বনবিভাগের সদস্যরা এখনো দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় কাজ করছেন। আর যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা তৎপর রয়েছেন। তবে ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসার কথা ছিল। হাতি দুটি ভারতে ফিরে গেছে বিষয়টি জানিয়ে তাদের পঞ্চগড় আসার বিষয়টি স্থগিত করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ভারতীয় বন্য হাতি দুটি ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় দিয়ে প্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট ইউনিয়নের দলুয়া পাড়া এলাকায় একটি গরুকে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। এছাড়াও উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিম গঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি, স্থানীয় এক ব্যাক্তির বাড়ির সীমানা বেড়া ক্ষতিগ্রস্থ করে।
এদিকে বন্য হাতির খবর জানাজানি হলে বাংলাবান্ধা ইউপির দক্ষিণ কাশিম গঞ্জ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তেতুঁলিয়া ইউএনও, বনবিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা হাতি দুটিকে বিরক্ত না করতে ও কাছে না যেতে হ্যান্ডমাইকে স্থানীয়দের নিষেধ করেন।
এ বিষয়ে পতাকা বৈঠকে ভারতীয় বন বিভাগের হাতি উদ্ধার বিশেষজ্ঞ দল সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে হাতি দুটি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে ‘বাংলাদেশ ভারত আন্তঃসীমান্ত হাতি সংরক্ষণ প্রটোকল ২০২০’ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক অনুপ্রবেশকৃত হাতি দুটি ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা কথা ছিল। তবে এর আগেই মঙ্গলবার রাতে হাতি দুটি নিজ দেশে ফিরে যায়।
এদিকে মঙ্গলবার দিনভর হাতি দুটি দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকার একটি ভূট্টা ক্ষেতে অবস্থান নিলেও বিকেলের দিকে স্থানীয়রা হাতিটিকে বিরক্ত করে। এ সময় হাতি দুটি ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয়দের তাড়া করলে হাতির আক্রমণে নুরুজ্জামান (২২) নামে এক বাক প্রতিবন্ধী তরুণ গুরুতর আহত হয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।