মাতৃভাষাকে সম্মান জানানোর দিন
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি; মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এর মধ্য দিয়ে মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পূর্ণ হলো। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা- ইউনেসকো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি অন্যান্য দেশেও পালিত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি আজ একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
বাঙালি জাতির জন্য এ দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার। অন্যদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। ১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ শাসকগোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক শহীদ হন।
সালাম ও জব্বারদের আত্মদান প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন ‘বরকত,
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সালামকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা বরকত সালাম আমাদের ভালোবাসে। ওরা আমাদের ভালোবাসে বলেই ওদের জীবন দিয়ে আমাদের জীবন রক্ষা করেছে। ওরা আমাদের জীবনে অমৃতরসের স্পর্শ দিয়ে গেছে। সে রসে আমরা জনে জনে, প্রতিজনে এবং সমগ্রজনে সিক্ত।’ এদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমরা অমরতা পেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা বলতে পারি দস্যুকে, বর্বরকে এবং দাম্ভিককে : তোমরা আর আমাদের মারতে পারবে না। কেননা বরকত সালাম রক্তের সমুদ্র মন্থন করে আমাদের জীবনে অমরতার স্পর্শ দিয়ে গেছেন।’
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। আজ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মিশনসমূহ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি আলোচনাসভা, পুস্তক ও চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা সাজানো হয়েছে। একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষাশহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করবে সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যম।
শহীদ মিনার ঘিরে কোনো হুমকি নেই : র্যাব ডিজি
শহীদ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন র?্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। গতকাল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।