চুপসে গেছে ঢাকা নগর পরিবহন

তাওহীদুল ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
চুপসে গেছে ঢাকা নগর পরিবহন

রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা, যত্রতত্র যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা কমানোসহ নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে ঘটা করে চালু করা হয়েছিল ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। শুরুতে বেশ সাড়া পড়েছিল এই ব্যবস্থায়। শুরুর সাফল্যে পর্যায়ক্রমে এই সেবা আরও বিস্তৃত হওয়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তবে পুরনো বাসের বদলে নতুন বাস না আসা, ব্যবস্থাপনায় উন্নতি না ঘটা এবং মালিকদের অনাগ্রহের কারণে সেই প্রত্যাশার বেলুন চুপসে গেছে। এখন রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্যোগটি। দেড়শ বাস দিয়ে যাত্রা শুরু করা এ সেবা থেকে সরে গেছে ১২৮টি বাস। এ বাসগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছে বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলো। ফলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ সেবা। এখন শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এতে বিআরটিসি প্রতি ডিপোতে মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিআরটিসি।

বাসে যাত্রী পরিবহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এড়াতে মূলত উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল। বেসরকারি বাসমালিকরা দাবি করেছিল তাদের বাসগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা করতে। এর একটি হচ্ছে সরকারিভাবে চলমান বাসগুলো কিনে নেওয়া এবং অপরটি হচ্ছে নতুন বাস কেনার জন্য ব্যাংক ঋণ দেওয়া। তার কোনোটিই হয়নি। ফলে এক রুটে একটি গাড়ি চলবে- এমন ব্যবস্থা আমলে নেয়নি পরিবহন কোম্পানিগুলো।

জানা গেছে, ঢাকা নগর পরিবহনে বাস নামিয়ে লোকসানে পড়ে বাস কোম্পানি। তাই এ সার্ভিস থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় তারা। এখন কেবল সরকারি সিদ্ধান্তে বিআরটিসির বাস চলছে ভর্তুকি দিয়ে। অন্যান্য বেসরকারি পরিবহনের বাস চলছে একই রুটে সমানতালে। বন্ধ হয়নি যাত্রী টানার প্রতিযোগিতাও। তাই নগর পরিবহনের বিআরটিসির গাড়ি আসার আগে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বাসে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের। ফলে শৃঙ্খলা ফেরেনি নগর পরিবহন সার্ভিসের।

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে প্রথম বাসসেবা চালু হয়েছিল। পরে আরও দুটি রুটে এই সেবা চালু হয়। সেই সময়ে চালু হওয়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেড়শ বাস থেকে কমতে কমতে এখন বিআরটিসির ২২টিতে ঠেকেছে। আগে বিআরটিসির মোহাম্মদপুর বাস ডিপো ও গাবতলী বাস ডিপো থেকে নগর পরিবহনের বাস চলাচল করত। দেখা গেছে, এ দুটি ডিপো লোকসান গুনেছে। গাবতলী ডিপো থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭০ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা। লোকসান হয়েছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮০ টাকা। মোহাম্মদপুর ডিপো থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ১৬৮ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৬ টাকা। লোকসান হয়েছে ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৬ টাকা।

বিআরটিসি দাবি করছে, নগর পরিবহনে চলাচলের কারণে বাসে যাত্রী কম ছিল। ফলে আয়ও কম হয়েছে। এর বিপরীতে জনবল বেশি হওয়ায় তাদের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অপারেশন খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে। করপোরেশন বলছে, প্রতিটি বাস দিনে গড়ে ২ থেকে ৩টি ট্রিপ দিতে পারে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর ডিপো থেকে নগর পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ। চলছে মিরপুর ও কমলাপুর ডিপো থেকে। ২৬ নম্বর ঘাটারচর ও পাগলাবাজার রুটে দিনে গাড়িপ্রতি দুটি ট্রিপ দিতে পারে। প্রতি ট্রিপে গড়ে যাত্রী পরিবহন করা যায় ১৪৮ জন। ২১ নম্বর রুট ঘাটারচর-কাঁচপুরে দিনে গাড়িপ্রতি এক ট্রিপ দিতে পারে। গড়ে ১৪৪ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, নগরীতে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারি পরিবহন বন্ধ হলেও বিআরটিসি সরকারি সিদ্ধান্তে যাত্রীসেবা অব্যাহত রাখবে। মানুষের সেবা দেওয়ার জন্যই বিআরটিসি।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে এবং যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন করে একক কোম্পানির অধীনে ডিটিসিএর মাধ্যমে বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় ঢাকা নগর পরিবহন। বর্তমানে ২১ ও ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসি এককভাবে বাস পরিচালনা করছে। ২১ নম্বর রুট হচ্ছে- ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, সিটি কলেজ, শাহবাগ, মতিঝিল, টিকাটুলি, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া ও সাইনবোর্ড হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত। আর ২৬ নম্বর রুট হচ্ছে- ঘাটারচর, ওয়াশপুর, বসিলা, ৪০ ফিট, তিন রাস্তা, মোহাম্মদপুর, সোবহানবাগ, কলাবাগান, ধানমন্ডি, ধানমন্ডি-৪, নিউমার্কেট, আজিমপুর, চানখাঁরপুল ও দোলাইরপাড় হয়ে পোস্তগোলা পর্যন্ত। রুট দুটিতে কেবল বিআরটিসির বাস চলাচল করছে। তাই নগর পরিবহন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।