শুভ্র দেবের ‘একুশে পদক’ নিয়ে কেন সমালোচনা!
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ নাগরিককে একুশে পদক-২০২৪ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর মধ্যে শিল্পকলায় সংগীত ক্যাটাগরিতে একুশে পদক পাচ্ছেন জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। আর নৃত্যকলায় একুশে পদক পাচ্ছেন শিবলী মোহাম্মদ, অভিনয়ে ডলি জহুর, এম এ আলমগীর, আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী।
তবে নেটদুনিয়ায় কথা উঠেছে- শুভ্র দেবের একুশে পদক পাওয়া নিয়ে! যা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনাও। শুরুটা হয় বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদের একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে।
অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে এই সুরস্রষ্টা বলেন, ‘দেশের সংগীতে শুভ্র দেবের অবদান আছে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি অবদান লাকী আখন্দ, আইয়ুব বাচ্চু, ফুয়াদ নাসের বাবু, নকিব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, হামিন আহমেদ, মাকসুদুল হক, মাহফুজ আনাম জেমস এবং প্রিয় গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরী ও শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর। প্রিয় শুভ্র দেবের উচিত এই প্রসঙ্গে কথা বলা। নিজে পদক না গ্রহণ করে সত্যকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি এখনই শুরু হোক…।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
সঙ্গে যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুভ্র দা আমার কাছের মানুষ। আমার ওপর রাগ করবেন কিন্তু সত্য বলছি, এই সত্য যদি স্বীকার করেন তাহলে শিল্পী হিসেবে তার জায়গা অনেক ওপরে থাকবে…। এখানে শুভ্র দেব নামটি উপলক্ষ মাত্র। যিনি পদক পাচ্ছেন তিনি যদি উপলব্ধি করেন তার চেয়ে যোগ্যতর মানুষটি পদকের ক্ষেত্রে বঞ্চিত, তিনি তার কথা বলে যাবেন। “সব ক্ষেত্রেই তা হওয়া উচিত। এই চর্চা থাকলে আরও বহু গুণী মানুষ পেতাম আমরা।” যাই হোক, সত্যিকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি আজ থেকেই, এখনই শুরু হোক…।’
প্রিন্স মাহমুদের এই কথাগুলোকে সমর্থন জানিয়েছেন সংগীতের বেশ ক’জন তারকা। এ নিয়ে নেটদুনিয়ায় যখন তুমুল আলোচনা-সমালোচনা, তখন বিষয়টি নিয়ে কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর পক্ষ থেকেও কথা বলা হয়।
গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ডদল এলআরবি’র ফেসবুক থেকে জানানো হয়, ‘একটি বিষয় ক্লিয়ার করার প্রয়োজন বোধ করি, এই রাষ্ট্রীয় পুরস্কারগুলো মূলত রাষ্ট্র নিজ তৎপরতায় দেয় না। এর বেশির ভাগই কোনো না কোনোভাবে লবিং ও নীতিনির্ধারক কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন সাপেক্ষে মনোনীত হয়। এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন যে, আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার ক্লিয়ারলি বিষয়টি আগেই জানিয়েছেন যে- এই প্রক্রিয়ায় কোনো পদক বা পুরস্কারের জন্য তারা আগ্রহী নয়। রাষ্ট্র যদি স্বউদ্যোগে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের স্বাধীন ভাবনা বলে বিবেচনা করা হবে। আরও জানা জরুরি যে, রাষ্ট্র আইয়ুব বাচ্চুকে একটা পুরস্কার দিয়ে খুব একটা সম্মানিত করতে পারবে বলে মনে হয় না। বরং এতে রাষ্ট্রের কিছু অগৌরব ঘোচার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
এদিকে একুশে পদক পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এমন আলোচনা-সমালোচনা নজরে এসেছে শুভ্র দেবেরও। একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার হয়ে গেছে ৩৯ বছর। ২৫ বছরের ওপরে বাংলা গান নিয়েই কাজ করেছি। বাংলা গান বিশ্ব দরবারে পৌছানোর জন্য আমি কাজ করে গেছি। এটা কোনো পুরস্কারের জন্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যারা চেনেন তারা অনেকেই বলেছেন, দেরিতে হলেও আপনি পেয়েছেন। আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যা দিয়েছি এটা আসলে কম শিল্পীই…। আমি আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কারই পেয়েছি। খালি তো গান গেলেই হয় না। অনেক সংগীত বোদ্ধারা আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আবার কেউ ঈর্ষান্বিতও হয়েছে। যারা আমাকে নিয়ে কথা বলছেন, তারা কিন্তু আমার লেভেলের না।’
প্রিন্স মাহমুদের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ক্যারিয়ারের দিক থেকে প্রিন্স মাহমুদ আমার অনেক জুনিয়র। ও আমার পল্লবীর বাসায় বসে থাকত, আমাকে দিয়ে একটা গান করার জন্য। একটা মিক্সড অ্যালবামের জন্য ও আমার বাসায় কয়েকবার গেছে। আসলে প্রিন্স তো আমাদের লেভেলের না, অনেক জুনিয়র। আর সত্যি কথা বলতে আমি তাদেরকেই কাউন্ট করব যাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক বড় অবদান আছে। যারা কিছু করতে পেয়েছে তাদেরই আমি কাউন্ট করব। যাক কারও প্রতি আমার কোনো খারাপ চিন্তা-ভাবনা নাই।’
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’