যশোরে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে অভিযান, যে ব্যাখ্যা দিল পুলিশ
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটকের নামে যশোরে আওয়ামী লীগের একটি অংশের জনপ্রতিনিধিদের হয়রানির অভিযোগ এসেছে। বৃহস্পতিবার যশোরে পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদারের প্রত্যাহার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের পর সেই হয়রানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, বাড়িতে পুলিশ এসে তাদের অসম্মান করে কথা বলছে। এদিকে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসপি বলেছেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো অপরাধকারী, সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।
যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল গত শুক্রবার তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘তিনি যে কোনো মুহূর্তে আটক হওয়ার শঙ্কা করছেন। বিশেষ সূত্রে তিনি জেনেছেন, তাদের পক্ষের জনপ্রতিনিধিদের আটক করে অস্ত্র, মাদক ইত্যাদি দিয়ে চালান দেওয়া হবে।’
জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকায় আতঙ্কিত হয়ে যশোর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা কয়েক ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চেয়ে ব্যর্থ হলেও তাদের প্রতিপক্ষ শাহীন চাকলাদারের পক্ষের জনপ্রতিনিধি ও কর্মীরা সব ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারছেন। প্রতিপক্ষের কোনো রকম বাধা দেওয়া না হলে কেন তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে সেটিও স্পষ্ট নয় অভিযোগকারীদের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোরের বেশ কয়েকজন বলেন, ‘পুলিশ যদি সত্যি সত্যি চাইত অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাস, মাদকব্যবসা বন্ধ করতে, তাহলে চিহ্নিতদের আটক করত। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের জনপ্রতিনিধিদের হেনস্তা করছে। অথচ প্রতিপক্ষের লোকজনকে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে।’
উল্লেখ্য, যশোরের রাজনীতিতে শাহীন চাকলাদারের দাপটের এবং বিভাজন তৈরির অভিযোগ অনেক দিনের। তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে বহুদিন থেকে একটি পক্ষের জনপ্রতিনিধিরা এসপির প্রত্যাহার চেয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, ‘শনিবার রাতেও আমার বাসায় পুলিশ গিয়েছিল। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। একজন জনপ্রতিনিধি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে জনগণের সামনে মারধর করা খুবই বাজে আচরণ।’
যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘ডিবি পুলিশ ও কোতোয়ালি থানা পুলিশের একাধিক টিম আমারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন।’
অবশ্য তাদের সেই দাবি অস্বীকার করেছেন যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন।
যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চেয়ারম্যানদের বাড়িতে গিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে যায় পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
বিপুল অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের অপসারণে দাবি জানানোর পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে পুলিশের একাধিক টিম যশোর উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ বলেন, পুলিশ জনপ্রতিনিধিদের সম্মান নিয়ে খেলছে। বাড়িতে এসে অশুভ ভাষায় কথা বলছেন।
কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাড়া গণগ্রেপ্তার ও জনপ্রতিনিধিদের পুলিশের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম বাচ্চু বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া কাউকে হয়রানি করার উচিত নয়।
জনপ্রতিনিধিদের এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার বিপরীতে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন বলেন, ‘সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের যে নিয়মিত অভিযান সেটি অব্যাহত আছে। কোনো জনপ্রতিনিধির বাড়ি যায়নি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে যশোর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এর পর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের তল্লাশি অভিযানের কথা জানান নেতাকর্মীরা।
যশোরের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো অপরাধকারী, সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সমাজের অনিষ্টকারী, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।’