রাজশাহীতে ২ বোনের মৃত্যু নিপাহ ভাইরাসে নয়
রাজশাহীতে বরই খেয়ে মারা যাওয়া শিশু মুনতাহা মারিশা (২) ও বড় বোন মুফতাউল মাশিয়ার (৫) মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে তাদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকায় পরীক্ষা শেষে জানানো হয়েছে নিপা ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হয়নি।
আজ রবিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘মারা যাওয়া দুই শিশুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকার মহাখালীতে পাঠিয়েছিলেন। আজ সন্ধ্যায় সেই রিপোর্ট পেয়েছেন। তাতে উল্লেখ আছে, নিপাহ ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হয়নি। এখন কোন ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হলো, সেটি নিশ্চিতে আরও পরীক্ষিা নিরীক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজন।’
এদিকে, ঘটনার পর মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা মঞ্জুর হোসেন (৩৫) ও মা পলি খাতুন (৩৪) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। একই ভাইরাসে তারাও আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে দম্পতিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ দম্পতি নিজেরা বরই খাননি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা দুটো বাচ্চাকেই কাছে রেখেছিলেন। শিশুদের মাধ্যমে মা-বাবার শরীরেও ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এই আশঙ্কায় তাদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পরীক্ষায় নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। আরও কিছু সময় পর্যবেক্ষণের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
শিশু দুইটির মা পলি খাতুন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সকালে কোয়ার্টারের গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। সেই বড়ই না ধুয়েই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। পরদিন বুধবার বেলা ১১টায় হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসে। এ সময় সে বারবার পানি পান করছিল। দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারিশার মৃত্যু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার সকালে বড় মেয়ে মাশিয়ারও শরীরে জ্বর আসে। একইসঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউতে পর্যবেক্ষণ থাকা মাশিয়াও গতকাল বিকেলে মারা যায়। ছোট মেয়ে মারিশা মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে। মৃত্যুর আগের রাতে বড় মেয়ে মাশিয়ারও একইরকম কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে।’
মৃত দুই শিশুদের বাবার মঞ্জুর হোসেন ও নাম পলি খাতুনের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। বাবা মঞ্জুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক। পরিবার নিয়ে তিনি রাজশাহীর চারঘাটে অবস্থিত ক্যাডেট কলেজের আবাসিক কোয়ার্টারে থাকেন। দুই শিশুকে তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়ায় দাফন করা হয়েছে।
জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও পলি খাতুনের শারিরীক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুদের মৃত্যুর পর বাবা-মাকে হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তারা দুই মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি।