প্রভোস্টের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে ছাত্রী লিখলেন, ‘সুহাসিনীর কারাগার থেকে বলছি’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) সুহাসিনী দাস হলের প্রভোস্ট ড. সায়েদা সুলতানার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সুহাসিনীর কারাগার থেকে বলছি’ শীর্ষক এক পোস্টে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন হলের হামিদা আক্তার নামের আবাসিক ছাত্রী । কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্টটির প্রতি সংহতি জানিয়ে তা শেয়ার করেন হলের শতাধিক ছাত্রী।
ফেসবুক পোস্টে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে লেখা হয়, ‘হলের বাইরে থেকে সব ধরনের খাবার অর্ডার করে আনায় রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। মেয়েরা হলের ডাইনিংয়ের খাবার ছাড়া বাইরে থেকে অর্ডার করা কোনো খাবার খেতে পারেন না। এদিকে সম্পূর্ণ হলে রান্নার জন্য মোট চুলা রয়েছে চারটি। হলে অবস্থানকারী ২৯০ জন শিক্ষার্থীর জন্য যা অপ্রতুল। পার্শ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের মতো প্রতি ফ্লোরে একটি করে নতুন চুলা চাইলে প্রভোস্ট তার জবাবে বলেন, ‘‘তাহলে তোমরা পাশের হলে চলে যাও। নয়তো বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাক’’।’
পোস্টে লেখো হয়, ‘এদিকে সুহাসিনী দাস হলে কোনো কমনরুম না থাকায় হলের ছাদে ছাত্রীরা তাদের অবসরে আড্ডা গল্পে কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে সেখানেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন হল প্রভোস্ট। প্রভোস্টের পক্ষ থেকে আরও দোষারোপ করা হয়েছে যে ছাদে অবস্থানরত ছাত্রীদের কথা আর গানের সুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের অসুবিধা হয়। উল্লেখ্য, হলের পাশেই উপাচার্য বাংলোতে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা।’
হামিদা আক্তার লেখেন, ‘একজন প্রভোস্টের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ হলে মেয়েরা ভালো আছে কি না, তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এখানে আমাদেরকে ভালো রাখার নামে নিত্য-নতুন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
হলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তাদের অনেকে তাদের হলের প্রভোস্টের নামে নানা কারণে তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ আনেন। পাশাপাশি হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরীও তাদের সঙ্গে নানা সময় খারাপ ব্যবহার করেন বলে জানান।
এ বিষয়ে হলের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিনিয়তই সুহাসিনী দাস হলের মেয়েরা ব্যক্তিগত জীবনে কি করবে তার কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে হল প্রভোস্টের কাছে। যা একদমই দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য একটি ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ম দেওয়া অর্থহীন। বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে খাবার আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। আমরা এই ভিত্তিহীন নিয়মের শেষ দেখতে চাই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ছাদে যাওয়া নিয়ে অভিভাবকের মাথাব্যথা থাকতে পারে তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে বুঝতেই পারতাম না।’
এ বিষয়ে সুহাসিনী দাস হলের প্রভোস্ট ড. সায়েদা সুলতানা বলেন , ‘মেয়েদের হলের ছাদে উঠা নিয়ে আগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাদের অনেক দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে এখন ছাদের গেইট উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। আর খাবারের ব্যপারটা হচ্ছে মেয়েদের হলের ডাইনিং ব্যতীত বাইরের অন্য কোনো পার্মানেন্ট মিল ব্যবস্থা চালু না করার ব্যপারে আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। তবে অকেশনালি বাইরে থেকে খাবার আনায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।’
হলে অবস্থানরত অনেক ছাত্রীর সঙ্গে নানা কারণে বাজে ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুহাসিনী দাস হলে অবস্থানরত প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী আমার মেয়ের মতো। তাদের নিরাপত্তা ও ভালো থাকার কথা চিন্তা করে হয়তো অনেক সময়ই আমাকে কড়া ভাষায় কথা বলতে হয়, তবে সেটা নিতান্তই তাদের ভালোভাবে থাকার জন্য করা শাসন ছাড়া আর কিছুই না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাইরের খাবার আনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কেননা রাত ১১টার দিকে বাইরের একজন ডেলিভারিম্যান মেয়েদের হলের সামনে এসে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করতে পারে। যা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা যদি বাইরের খাবার খেতে চায় তাহলে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই খাবার নিয়ে আসুক।’
তিনি বলেন, ‘আর প্রভোস্টের বিরূদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মুষ্টিমেয় কিছু ছাত্রীর কাজ। তবে প্রভোস্ট অবশ্যই অল্প কিছু শিক্ষার্থীর মর্জি মোতাবেক চলবেন না। উনার সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও জীবনমান নিয়ে চিন্তা করতে হয়।’