‘সমাজে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি বহমান’

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:০১
শেয়ার :
‘সমাজে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি বহমান’

সমাজে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি বহমান বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় প্রীতি ওরাং নামের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি আমাদের সময় পত্রিকায় ‘সাংবাদিকের বাসায় শিশু গৃহকর্মী প্রীতি ওরাং হত্যার ন্যায্য বিচার চাই’-শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদসহ একই বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে কমিশন চেয়ারম্যান এমন মন্তব্য করেন।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর্মী নির্যাতন একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকার কারণে নির্যাতনে জড়িতদের সাজা হয় না বললেই চলে। ফলে, সমাজে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি বহমান। এ কারণে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়াটাই একটি চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, ‘যদিওবা কোনো বিষয় মামলা হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে অর্থের দাপট, পেশিশক্তি এবং রাজনৈতিক দাপটের কাছে পরাস্ত হতে হয় দুর্বলদের। ফলে, শুরুতে বা মাঝপথে আইনবহির্ভূত সমঝোতা লক্ষ্য করা যায়।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে একটি স্বনামধন্য পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের বাসায়। যেখানে সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে ৬ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী প্রীতির মৃত্যুর এ ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত নির্মম, মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই ধরণের পাশবিক ঘটনা আমাদের বিবেককে চপেটাঘাত করে। ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি নতুন কোনো ঘটনা নয়, এটি পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যা ঘটেছিল গত বছর ৬ আগস্ট একই সাংবাদিকের বাসায়।’

এই ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক প্রকৃতপক্ষে সেদিন কী ঘটেছিল তা অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত মর্মে কমিশন মনে করে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, গৃহকর্মী প্রীতি ওরাং এর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করতে পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) বলা হয়। আদেশের অনুলিপি সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় জানা যায় যে, রাজধানীতে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী, চা শ্রমিকের কন্যা প্রীতি ওরাং নামক এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের বাসার ৯ তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় শিশু প্রীতি ওরাং। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিহত গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংয়ের বাবা লুকেশ ওরাং বাদী হয়ে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে মর্মে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে আশফাকুল ও তানিয়াসহ ওই বাসা থেকে মোট ছয় জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। বর্তমানে চার দিনের রিমান্ডে আছেন আশফাকুল-তানিয়া দম্পতি।