স্ত্রীকে আফজাল হোসেনের খোলা চিঠি

বিনোদন প্রতিবেদক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৮
শেয়ার :
স্ত্রীকে আফজাল হোসেনের খোলা চিঠি

গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। স্ত্রী তাজিন হালিম মনার সঙ্গে দাম্পত্যজীবনের ৩২ বছর পূর্ণ করেছেন গেল বছর। স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই কাটছে তার দিন। তবে অভিনয় ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে সংসারে ঠিকমত সময় দিতে পারেন না এই অভিনেতা। সেকথা বহুবার অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি।

দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ পথচলায় আফজাল হোসেন এবার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন, স্বামী হিসেবে তিনি কেমন? শুধু তাই না, আরও জানতে চেয়েছেন উপযুক্ত স্বামী কি হয়ে উঠতে পেরেছেন?

আজ বৃহস্পতিবার স্ত্রী তাজিন হালিম মনাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আফজাল হোসেন। লেখার শুরুটা হয়েছে- ‘কিছু কিছু প্রশ্নের স্বভাবই হচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ তিমি মাছের মতো ভুশ করে পানির উপর পিঠ ভাসিয়ে দেওয়া। বসন্ত এসে গেছে। রাস্তাভরা ফাগুনের রং লাগা মানুষ দেখি। বাতাসে আনন্দের গন্ধ। কলকাতা আজ অন্যরকম। সুখী সুন্দর মানুষেরা ঝলমলাচ্ছে যেন। মনে একটা পুরানো প্রশ্ন জাগে। মনার প্রতি জন্মদিনেও এই প্রশ্নটা তিমি মাছের পিঠ দেখানোর মতো ভুশ করে জেগে ওঠে।’

এরপর বরেণ্য এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘আমি স্বামী হিসাবে কেমন? উত্তরটা ভালো কিংবা মন্দ নয়- ভাবায়। উন্নত স্বামী হওয়ার উপাদান আমার মধ্যে কম সেটা বুঝি। উপযুক্ত স্বামী হয়ে ওঠার জন্য কেমন কেমন গুণ থাকতে হয় জানলে গুণে-মানে অনন্য একখান স্বামী হয়ে ওঠার উদ্যোগ কি গ্রহন করতাম? সোজা সাপটা উত্তর হচ্ছে- না।’


দীর্ঘ খোলা চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি সৃষ্টিকর্তার সুনজরে থাকা মানুষ। তিনি কপালে লিখে দিয়েছেন, এই বান্দা চিরকাল তাইরে নাইরে জীবন কাটাইতে চায়, তাহা মনজুর করা হইল। তারপর তিনি জোড়া বানানোর জন্য খাতা খুলে তালিকা দেখেন। খুঁজতে থাকেন বিপরীত পক্ষের অশেষ সহনশীল, ঠান্ডা মাথার, অতি গোছালো, কম কথা বলা, প্রেমময় কিন্তু মনে খুব জোর অলা কাকে পাওয়া যায়! তখনই পাওয়া যায়নি। অতপর ঐসব উপাদানে সমৃদ্ধ একজনকে সৃষ্টি করার প্রয়োজন অনুভব করিলেন। সৃজন শেষ হইলে দেখিলেন পুরুষটি উত্তরের হইলে নারী রত্নটি দক্ষিণের- শুধু ধরণে নয়, দুইজনের বয়সের মধ্যেও বিস্তর তফাৎ হইয়া গিয়াছে।’

আরও বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা ভাবিলেন, হউক। নারী রত্নটিকে অনেক গুণসমৃদ্ধ করিয়া প্রস্তুত করা হইয়াছে, সমস্যা হইবে না। সমস্যা হয়নি। তিরিশ বছরে আমার অস্থিরতা কমেছে, হঠাৎ মাথা গরম হওয়া কমেছে, ঠান্ডা মাথায় ভাববার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। অনেক অনেক কিছু বিনা চেষ্টায় এইরকম ভালোর দিকে বদলে গেছে। অগোছালো স্বভাবটার কোনো উন্নতি হয়নি। হয়নি বলেই অপর পক্ষের ঠান্ডা মাথা প্রায়ই গরম হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ভাগ্যিস হয়। হয় বলেই বোঝা যায়, সংসারে প্রাণ আছে।’


বিবাহিত জীবনে এই অভিনেতা স্বাধীন সেকথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘কত মানুষকে বলতে শুনি, অবিবাহিত থেকে বিবাহিত হওয়া, শুধু অ এর পার্থক্য নয়- জীবন বদলাতে হয়। ঘরে আমরা প্রায়ই মিনতির সুরে গাওয়া- “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও…” গানটা শুনি। শচীন দেব বর্মনের “তুমি আর নেই সে তুমি”ও বাজে। এগুলো মনের কথার প্রতিধ্বনি নয়, আমাদের প্রিয় গান। প্রিয় বলেই বারবার শুনতে ভালো লাগে। বিবাহিত জীবন নিয়ে কত মানুষের বিচিত্র রকমের হাঁসফাঁস রয়েছে। আমার বা মনার হাঁস নেই, ফাঁসও নেই। সে তার মতো, আমি আমার মতো। কেউ কখনোই কারো ঘাড়ে চড়ে বসতে চাইনি। বত্রিশ বছর ধরে আমাদের ঘাড় স্বাধীন। বত্রিশ বছর ধরে সে আমাকে বিশেষ কোনো পরিচয়ের নয়, মানুষ বিবেচনা করে- এ দুয়ের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে!’

সবশেষ আফজাল হোসেন বলেন, ‘রোজ ঘরে ঘরে ঘুরঘুর করুক ফাগুনের রঙ, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস।’