ধানমন্ডি লেকে এবার হবে নজরুল সরোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৬
শেয়ার :
ধানমন্ডি লেকে এবার হবে নজরুল সরোবর

রাজধানীর ধানমন্ডি লেকে রবীন্দ্র সরোবরের আদলে এবার নির্মিত হবে নজরুল সরোবর। আজ বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

আজ দুপুরে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান-২০২৪-এ অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে এই ধানমন্ডি লেককে একটি নান্দনিক লেক পরিণত করেছেন। ব্যাপক মহাপরিকল্পনা নিয়ে তিনি এটার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সুন্দর পরিবেশ করে দিয়েছেন। ধানমন্ডি লেককে আরও সুন্দর, নান্দনিক এবং আকর্ষণীয় করার জন্য আমরা পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে কাজ করছি। সংস্কারের জন্য এখন আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আরও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আরও কিছু সংস্কারের জন্য।’

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ধানমন্ডি ৩২ থেকে সাম্পান পর্যন্ত নতুন যে জায়গাটি আমরা দখলমুক্ত করেছি, সে জায়গায় বরীন্দ্র সরোবরের আদলে নজরুল সরোবর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিগগিরই এটার কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নজরুল সরোবরের নকশা দেখে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নজরুল সারোবরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করবেন বলে আমরা আশা করছি।’

ধানমন্ডি লেকের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ সময় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিতে চাই, কোনো ভবঘুরে এখানে থাকতে পারবে না। এখানে যে সব খাবারের দোকান রয়েছে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে তাদের রান্নাঘর বন্ধ করতে হবে। সাড়ে ৯টার পরে কোনো খাবারের অর্ডার নেওয়া ও পরিবেশন করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাইরের অংশে যে রেস্তোরাগুলো আছে, যেমন পানশী ও সাম্পান, সেগুলোর রান্নাঘর রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। আর সপ্তাহে একদিন ‘‘বুধবার’’ ধানমন্ডি লেকের পুরো এলাকা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। বুধবারে কোনো রকম ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কেনা-বেচা এখানে হবে না। বুধবারে আমরা সবাই মিলে ধানমন্ডি লেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে টিপ-টপ রাখব। যাতে করে বৃহস্পতিবার থেকে শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ থেকে যারা এখানে আসেন, তারা যেন নান্দনিক, সুন্দর ও সবুজ উপভোগ করতে পারে।’

বায়ু দূষণ নিয়ে এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, বায়ু দূষণের কারণ নির্ণয়ে যে সব কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তাদের তথ্য অনুযায়ী- ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানিই ৮০ শতাংশ দায়ী। আমরা যে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ব্যবহার করি তা বৈশ্বিক মানদণ্ডে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের। যে কারণে আমাদের বায়ুতে যেই পদার্থগুলো নিঃসৃত হয় তা অস্বাস্থ্যকর এবং বিপদজনক। সেজন্যই মাঝে মধ্যে আমরা বারবার বায়ু দূষণের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে অবস্থান করি। আর বাকি ২০ ভাগের মধ্যে অন্যান্য কারণগুলো হলো ইটের ভাটা, নির্মাণসামগ্রীর ধুলা-বালু ইত্যাদি।’

তিনি বলেন, ‘বায়ু দূষণ রোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব নির্মাণকাজ হচ্ছে, আমরা সেগুলো তদারকি করছি। আমরা চেষ্টা করছি যেন খনন কাজের মাটি দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা না হয়। রাজউকের একটি অংশের কার্যক্রম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় যে কাজগুলো হয় সেগুলো যেন বেষ্টনী দিয়ে ঢেকে তারপরে কাজ করা হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়গুলো আমরা রাজউকের সঙ্গে সমন্বয় করছি। তারা যেন উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের সহযোগিতা দরকার হলে প্রয়োজনে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।’

কলাবাগানের লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস 

সাংবাদিকদের মেয়র তাপস বলেন, ‘তবে আপনারা যদি তিন বছর আগের সময়ের সঙ্গে এখন তুলনা করেন, তবে দেখতে পাবেন নির্মাণসামগ্রীর জন্য বায়ু দূষণের মাত্রা আমরা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমাদের মূল সড়কগুলোতে আমরা নিয়মিত পানি দিচ্ছি। আমাদের ধুলা সংগ্রহের যে গাড়িগুলো আছে সেগুলো দিয়ে উড়ালসেতু হতে ধুলা-বালু সংগ্রহ করছি। তবে বায়ু দূষণের মানদণ্ডে আমরা কোনোভাবেই নিচে আসবো না যতক্ষণ পর্যন্ত না ভালো মানের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে ঢাকা শহরে ভালো মানের জীবাশ্ম জ্বালানি নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেব। তাদেরকে অনুরোধ করব, ঢাকা শহরে যে জ্বালানি দেওয়া হয় তা যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের জ্বালানি হয়।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আমরা ধানমন্ডিবাসীকে ভালোবাসা দেখাব পরিচ্ছন্নভাবে। সেই হিসেবে আজকে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। এখানে সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। সারাদিন আজকে এখানে অভিযান চলবে। এটা কিন্তু এ রকম নয় যে, আজকে শুরু করে কালকে থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। এটা আজকে থেকে শুরু হলো, অন্তত আগামী পাঁচ বছর চলবে।’

উল্লেখ্য, আজকের বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ১৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী অংশ নেন।

এর আগে কলাবাগানের লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শহীদ শামসুন্নেছা আরজু মনি শিক্ষাবৃত্তি ও বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ ছাড়া লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ফটকের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন তিনি। পরে ভাষা শহীদ শফিউর রহমান সড়ক (শিক্ষা অধিকার চত্বর হতে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত অংশের সড়ক) নাম ফলক স্থাপন করেন ডিএসসিসি মেয়র।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল এবং কাউন্সিলরদের মধ্যে করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মাহবুবুর রহমান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলরৈ শিরিন গাফফার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।