মৃত মানুষের কিডনিতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন পপি
হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মৃত মানুষের (ব্রেন ডেড) কিডনি গ্রহণ করা তাহমিনা ইয়াসমিন পপি। ৬৪ বছর বয়সী এই নারী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় বঙ্গবন্ধু বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য ও জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ তার কার্যালয়ে তাহমিনা ইয়াসমিন পপির হাতে ছাড়পত্র তুলে দেন।
ছাড়পত্র দেওয়ার সময় উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের একটি আন্দোলন হওয়া উচিত। এটি করা গেলে অনেক মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে সহজেই বাঁচানো যাবে। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দুটি সফলতা দেখিয়েছি। এ জন্য আমি ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই যে মহৎ মানুষ প্রয়াত কামরাঙ্গীচরের বাসিন্দা মো. মাসুম আলম ও তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার এবং তার পরিবারের প্রতি। তাদের ত্যাগের ফলে আজ এই তাহমিনা ইয়াসমিন পপি নতুন করে জীবন পেলেন। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের সময় তাহমিনা ইয়াসমিন পপির সিরাম ক্রিটিনিন ছিল ৯। এখন ০.৯ নেমে এসেছে। তার মানে এই রোগী পুরোপুরি সুস্থ।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সারাহ্ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের আহ্বায়ক রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রাসেল, সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের সদস্য সচিব ক্যাডাভেরিক কাউন্সিলর আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব, আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌফিক আহমেদ পিটু, উপ-রেজিস্ট্রার সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
গত ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে ঢাকার কামরাঙ্গীচরের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী মো. মাসুম আলমের ‘ব্রেন ডেথ’ হয়। অভিভাবকরা তার অঙ্গদানের সম্মতি দেন। ওই দিন মো. মাসুমের একটি কিডনি গ্রহণ করেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ৪৯ বছর বয়সী মোসাম্মৎ তাহমিনা ইয়াসীন। আরেকটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় ৪৪ বছর বয়সী জাকির হোসেন নামের আরেকজনের শরীরে। এ কার্যক্রমের প্রধান সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালেল নেতৃত্বে এ ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করা হয়।
অন্যদিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে (এনআইকেডিউ) জাকির হোসেনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।
দেশে প্রথমবারের মতো অঙ্গদান করেন সারাহ ইসলাম নামে ২০ বছরের এক তরুণী। তাকে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সারাহর শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা দুজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। সারাহর চোখের কর্নিয়াও দেওয়া হয় অপর দুজনকে। তারা ভালো আছেন।
প্রসঙ্গত, ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করার পদ্ধতিকে বলা হয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট।